আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি বেড়ে ১৫,৯৩৬ কোটি টাকা

রোহান রাজিব: দেশে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ যেমন বাড়ছে, একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআইএস) খেলাপিও। আর্থিক খাতে ক্যানসারের মতো বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ ক্ষতিগ্রস্ত করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআইএস) খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৫৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কভিডের কারণে গত দুই বছর গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে নানা সুবিধা পেয়েছে। চলতি বছরে নতুন করে তাদের আবারও সুবিধা দেয়া হয়েছে। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠান ভাবছে, ঋণ পরিশোধ না করলেও চলবে। তাই ব্যাংক খাতের মতো এ সেক্টরেও খেলাপি ঋণ দিন দিন বেড়েই চলছে। এখনই উচিত হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর হওয়া। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর না হলে এ খাতের খেলাপি ঋণ দিন দিন আরও বাড়তে থাকবে। আর নতুন নতুন ছাড় দেয়ার সিস্টেমও বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন শেষে এনবিএফআইগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ৬৯ হাজার ৩১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১০ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা।

এছাড়া গত তিন মাসের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ৭০৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৯৭৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে খেলাপি ছিল ১০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। তিন মাস পর জুনে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ২৫ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। জুলাই-সেপ্টেম্বর খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় এক হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

এদিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুন শেষে দেশে বিতরণ করা মোট ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের জš§লগ্ন থেকেই দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে নতুন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়ায় আর্থিক খাতে অনিয়মের জন্য কিছুটা হলেও দায়ী।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে যেভাবে নজরদারি করা হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে, সেভাবে নজরদারি করা হয়নি। সেই সুযোগে জনগণের টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ করায় বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। সঠিক সুপারভিশন করা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের বোঝা কমানো সম্ভব হতো। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে এখনই এ সেক্টরকে নজরদারি করা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০