Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:14 pm

আর গাইবেন না লাকী আখান্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক লাকী আখান্দ আর নেই। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে তিনি মারা যান। দীর্ঘ আড়াই মাস হাসপাতালে থেকে মাত্র সপ্তাহখানেক আগে তিনি বাসায় ফিরেছিলেন।

পরিবার সূত্র জানায়, ফুসফুসে আক্রান্ত শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর আরমানিটোলার বাসা থেকে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রসঙ্গত, গুণী এই সংগীতজ্ঞ অনেক দিন ধরেই মরণ ব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ দেশে ফেরেন তিনি। সেখানে কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছিল তার। একই বছরের জুনে আবারও থেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পরে আর তার সেখানে যাওয়া হয়নি।

অসুস্থতার প্রথম থেকেই লাকী আখান্দ ও তার পরিবার কোনোরকম আর্থিক সহযোগিতা গ্রহণের বিষয়ে বেশ কঠোর ছিলেন। দেশের শীর্ষ শিল্পীদের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে চাইলেও বিনয়ের সঙ্গে লাকী আখান্দ সেটি গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। গুণী ও অভিমানী এ মানুষটি অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় নিজের চিকিৎসা চালাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তবে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় ভালোবাসা হিসেবে সেটি তিনি সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন।

লাকী আখান্দের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবার কাছে তার সংগীতে হাতেখড়ি। তিনি ১৯৬৩ থেকে ৬৭ সাল পর্যন্ত শিশুশিল্পী হিসেবে রেডিও-টেলিভিশনের বিভিন্ন সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠানে গেয়েছেন। ১৮ বছর বয়সে এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেন।

১৯৭১ সালে লাকী আখান্দ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।

১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে লাকী আখান্দের প্রথম সলো অ্যালবাম ‘লাকী আখান্দ’ প্রকাশ পায়। ‘এই নীল মণিহার’, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘মামনিয়া’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’Ñএসব গানের জন্য সংগীতানুরাগীরা তাকে বহুদিন মনে রাখবেন।

১৯৮৭ সালে ছোট ভাই হ্যাপী আখান্দের মৃত্যুর পর সংগীতাঙ্গন থেকে অনেকটা স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন এই শিল্পী। প্রায় এক দশক নির্বাসনে থাকার পর ১৯৯৮ সালে ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবাম দুটি নিয়ে তিনি আবার শ্রোতাদের মাঝে ফিরে আসেন।