চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রাম টিকোইল। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ হতদরিদ্র। তাই তাদের বসতবাড়ি মাটি দিয়ে তৈরি। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা আর রুচির বেলায় বাড়ির দেয়ালগুলো যেন কারুশিল্পের একেকটি অনিন্দ্য সুন্দর ক্যানভাস। প্রায় সব বাড়ির কাদামাটির দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রামীণ সমাজের অপরূপ সৌন্দর্য। লতাপাতা, কবুতর, নৌকা, পাখি, ফুল কিংবা সবুজে ভরা ধানক্ষেত প্রভৃতি রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন বাসিন্দারা। চোখজুড়ানো চিত্র দেয়ালজুড়ে, যেন প্রকৃতির অনবদ্য এক অধ্যায়।
মাটির ঘরের দেয়ালে আলপনা ফুটিয়ে তোলার কারিগর টিকোইলের বধূরা। সংসারের কাজের ফাঁকে তারা রঙিন করে তুলেছেন গ্রামটি। প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কারুকার্য। বাড়ির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে আঙিনা, দেওয়াল, ঘর তাদের রুচির পরিচয় বহন করছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভগবানের বাণী, পয়লা বৈশাখের আমেজ, চোখজুড়ানো ফুলের পাশে পাখা মেলে দাঁড়িয়ে থাকা ময়ূর, লালমাটির ওপর খড়িমাটির ফুল প্রভৃতি চিত্র চোখে পড়ে। এভাবেই মনের কল্পনাগুলোকে দেওয়ালের ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন গ্রামের বধূরা। এসব আলপনা যে কোনো মানুষের চোখ জুড়িয়ে দিতে বাধ্য।
বিভিন্ন পূজা, বিয়ে, নবান্ন, পয়লা বৈশাখসহ বিভিন্ন উৎসবে তাদের আলপনার ক্যানভাস হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয়। লালমাটি, খড়িমাটি (সাদা রং) এবং সবুজ, হলুদ, নীল, খয়েরি ও লাল রঙের তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠে রঙিন দৃশ্য। তবে বৃষ্টি হলে মুছে যায় ক্যানভাসের রং। তবু হার মানেন না তারা। আবার নতুন করে শুরু করেনÑনতুন বিষয়বস্তু আঁকেন, সাজিয়ে তোলেন বাড়ি।
গ্রামের দাসু বর্মণের স্ত্রী দেখন বালা বর্মণ বলেন, ছোটবেলায় আলপনার প্রতি আকৃষ্ট হই। এ গ্রামে ৩৫ বছর ধরে আছি। সেই বয়স থেকেই শুরু রঙিন আলপনার গল্প। তবে আগে কোনো রং পাওয়া যেত না। লালমাটি ও খড়িমাটি ছিল আলপনার দুটি রং।
বিজয় বর্মণের স্ত্রী রমিতা বর্মণ বলেন, গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ গরিব হলেও শৌখিন। সারা বছর আলপনা করে এ গ্রামের মানুষ। বিভিন্ন উৎসবে নানা রঙে বর্ণিল হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম।
সরেন বর্মণ বলেন, বাড়িতে আমার স্ত্রী ও পুত্রবধূ আলপনা করেন। বাড়ির সব দেওয়ালে রয়েছে তাদের হাতের ছোঁয়া। বাড়িতে আলপনা থাকলে শৌখিনতার পাশাপাশি মনের তৃপ্তি বাড়ে।
নেজামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক বলেন, টিকোইল গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। আলপনা তাদের একটি ঐতিহ্য। সারা বছর আলপনা করে তারা বাড়ি রঙিন করে রাখেন। তাদের হাতের কারুকার্য এরই মধ্যে অনেকের নজর কেড়েছে।
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ