আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকদের সিআইবি রিপোর্ট চেয়েছে ডিএসই

নিয়াজ মাহমুদ: টানা আট বছর ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে থাকার পর মূল মার্কেটে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। মূল মার্কেটে ফেরার জন্য ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বরাবর আবেদন করেছে কোম্পানিটি। কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা পরিচালকদের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) প্রতিবেদন সংগ্রহ এবং তা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বিএসইসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএসই।

ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) একেএম জিয়াউল হাসান খান স্বাক্ষরিত বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের সব উদ্যোক্তা ও স্বাধীন পরিচালকদের সিআইবি রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। গত ২০ জুলাই পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ডিএসইর ওটিসি মার্কেট থেকে মূল পুঁজিবাজারে আসতে চাচ্ছে। এজন্য ডিএসইতে পুনঃতালিকাভুক্তির আবেদন করেছে। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ঋণের তথ্য জানা জরুরি।

জানা গেছে, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন, মৃত আমিরুল ইসলামের ছেলে মো. আজিজুল ইসলাম। মৃত কেএম সোলাইমানের সন্তান রুৎফুন নেসা ইসলাম। তিনি মো. আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। পরিচালকের মধ্যে রয়েছে তাদের ছেলে মো. আজিমুল ইসলাম। আবদুস সালামের মেয়ে নাবিলা সালাম। এছাড়া কোম্পানিটির স্বাধীন পরিচালকের নামের তালিকায় আছেন গোলাম মোস্তফা।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী শর্ত পূরণ করে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ মূল মার্কেটে ফিরতে সব ধরনের কাগজপত্র জমা দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ত্রুটি ছিল, যা কোম্পানিটি সংশোধন করেছে। এখন পরিচালকদের সিআইবি রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বিএসইসির অনুমোদনের পর ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত  নেবে বলে জানা গেছে।

এদিকে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত লেনদেন করতে যেসব শর্তপূরণ করতে হয়, তা আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের রয়েছে। নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিচ্ছে এবং কোম্পানিটি মুনাফায় রয়েছে।

কোম্পানিটি মূল মার্কেটে ফেরার ঘোষণার পর থেকেই ১০ টাকা ফেসভ্যালুর শেয়ারদর ১০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ৩১ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত অর্ধবার্ষিক (জুলাই’১৬-ডিসেম্বর’১৬) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের কর পরিশোধের পর মুনাফা হয়েছে তিন কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এক দশমিক ৭২ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল যথাক্রমে তিন কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার টাকা ও এক দশমিক ৩৯ টাকা।

তালিকাচ্যুত হয়ে ওটিসিতে যাওয়ার আগে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ সজীব নিটওয়্যার হিসেবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত ছিল। ২০১০ সালে সজীব নিটওয়্যারের চার উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার কিনে কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ নেয় আলিফ গ্রুপ। নাম পরিবর্তন করে হয় আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। এরপর পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মালিকানাধীন সিএসসি কামাল টেক্সটাইলের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনে গ্রুপটি। একইভাবে তালিকাভুক্ত সেন্ট্রাল ফার্মার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কিনেছে।

 

উৎপাদন বন্ধ, এজিএম না করা ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ায় ২০০৯ সালে বিএসইসির নির্দেশে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজকে (সাবেক সজীব নিটওয়্যার) মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠায় ডিএসই। পরের বছর কোম্পানিটি খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করে এর মালিকানা নেয় ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলামের আলিফ গ্রুপ। সজীব নিটওয়্যারের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহানসহ অন্য তিন উদ্যোক্তা-পরিচালক সেলিনা আফরোজ, সুফিয়া খাতুন ও মোহা. শওকত হোসেনের শেয়ার নেয় গ্রুপটি। মালিকানা নেওয়ার পর নাম বদলের পাশাপাশি মূলধন বাড়ানো হয়েছে এবং নতুন করে ব্যবসা চালু করা হয়।

১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের কারাখানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার রয়েছে ছয় দশমিক ৩৩ শতাংশ। বাকি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০