কৃষকের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস ফসল উৎপাদন। স্বভাবতই ভালো ফলন হলে তারা আনন্দিত হন। কিন্তু গতকাল শেয়ার বিজে একটি প্রতিবেদনের শিরোরাম ছিল ‘ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে: আলু নিয়ে বিপাকে যশোরের চাষিরা’। এমন খবর অনেকের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা।
প্রতিবেদনটি পড়ে জানা গেল, লাভের আশায় আলু আবাদ করেছেন চাষিরা। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, আবার হিমাগারে জায়গা না পাওয়ায় সংরক্ষণ করতে না পারায় তারা শঙ্কিত। স্থানীয় বিভাগের দাবি, আলুর দাম বর্তমানে একটু কম হলেও সামনে বেশি দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা কষ্টে-সৃষ্টে চাষ করবেন, আবার আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন না, এটি দুঃখজনক। কৃষক অবশ্যই ঘরে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু সবার তো ঘরে সংরক্ষণের সামর্থ্য নেই। তাই ঢালাও ‘পরামর্শ’ না দিয়ে কৃষি বিভাগের উচিত পর্যাপ্ত হিমাগারের ব্যবস্থা করা।
আলু চাষ করতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে ভালোভাবে জমি চাষ দিতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার দিয়ে রোপণ করতে হয় আলুবীজ। ১০-১২ দিনের মাথায় জমিতে সেচ দিতে হয়। এর ১৫-১৬ দিনের মাথায় আলুগাছ বেঁধে দিতে হয়। তারপর শুরু হয় কীটনাশক ছিটানোর পালা। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১৫ দিন পরপর আর আলুক্ষেতে কীটনাশক দিতে হয়। এভাবে ৮৫-৯০ দিন পার করতে হয় প্রত্যেক আলুচাষিকে। এরপর শুরু হয় ক্ষেত থেকে আলু ওঠানোর পালা। তাই আলু চাষ শ্রম ও ব্যয়সাধ্য। কিন্তু আলু ঘরে তোলার সময়ই তারা পড়ছেন সমস্যায়। হিমাগারে রাখতে পারছেন না, ঘরেও রাখতে পারছেন না। এখন বিক্রি করলেও ভালো দাম পাবেন না।
কবি কৃষককে ‘দেশমাতারই মুক্তিকামী দেশের সে আশা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখন কৃষককে রক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আলু সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারলে কৃষক ভালো দাম পেয়ে লাভবান হতেন। কিন্তু আলু চাষের ভরা মৌসুমে একশ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী আগেভাগে হিমাগার দখল করে রেখেছেন। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে সংরক্ষণ করেন। দাম বাড়লেই তা বিক্রি করে দেন। যশোর অঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪টি হিমাগার রয়েছে। এ হিমাগারগুলোয় আলুর ধারণক্ষমতা প্রায় ৮০ হাজার টন। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা আগেভাগে বুকিং দেয়ায় প্রান্তিক চাষিরা সেখানে আলু সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। কৃষককে এভাবে জিম্মি হওয়া থেকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে আলু রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে। কোনোভাবেই কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। কভিডকালে সরকার নানা পেশার লোকজনকে প্রণোদনা দিয়েছে। সংগঠিত পেশার লোকজনই পেয়েছেন প্রণোদনা। কিন্তু কৃষকরা সংগঠিত নন, কিংবা সরকারকে চাপ দিয়ে সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন না। কৃষক যাতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন, সেজন্য সরকারি উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণ করতে হবে, অথবা সুযোগসন্ধানীদের দৌরাত্ম্য থামাতে হবে। শুধু যশোর নয়, এটি সারাদেশের চিত্র। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এত আলু সংরক্ষণ করা কৃষকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের রক্ষায় পর্যাপ্ত হিমাগার নির্মাণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রণোদনা দিতে হবে।