Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:14 am

আলুর দামে খুশি রাজশাহীর কৃষক

আসাদ নূর, রাজশাহী: মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম বাড়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। গত বছরের তুলনায় দাম সন্তোষজনক হওয়ায় ক্ষেত থেকেই অনেক কৃষক আলু বিক্রি করছেন। অন্যদিকে গত বছরে হিমাগারে রাখা বীজ আলুর দাম বেশ চড়া থাকায় এবারেও চাষিরা আলু সংরক্ষণে ঝুঁকবেন বলে আশা করছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টেরিক (লাল) জাতের আলু বেশি চাষ হয়। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো দামের আশায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এসব জমি থেকে আট লাখ ৪০ হাজার মেট্টিক টন উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

গতকালের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত জেলায় মোট আলু সংগ্রহ করা হয়েছে ৭৩ শতাংশ। এর পরিমাণ ছয় লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ মেট্টিক টন। কয়েক কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক বেশি। ক্ষেতেই প্রতি কেজি ডায়মন্ড জাতের আলু ১২ থেকে ১৩ টাকা, কার্ডিনাল, অ্যাস্টেরক জাতের আলু ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় এন্দুরকানি আলু ১৯ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই অনেক কৃষক ক্ষেতেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আরও বেশি দামের আশায় বীজ আলু সংগ্রহে মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে আলুর ন্যায্য দাম পান না কৃষকরা। চলতি বছর দাম ভালো পাওয়ায় আলু চাষে সার্থক হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

তানোর উপজেলার যোগীশহ এলাকার কৃষক রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। এবার দাম সন্তোষজনক। আমি আলু তোলা শুরু করেছি। বিঘাপ্রতি ফলন গড়ে ৭০ মণের বেশি ছাড়া কম হবে না। আবার কোনটা ৭০ বস্তা পার হয়ে যাবে (৬৫ কেজির বস্তা)। তবে সব আলু তোলা না পর্যন্ত সঠিক হিসেবে বলতে পারব না। এটা নিশ্চিত যে, এবার বেশ মুনাফা করতে পারব।

একই উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের আলু চাষি ও ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব বলেন, গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। কিন্তু এ বছর বীজ সংকট ও দাম বেশি হওয়ায় ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। নমুনা হিসেবে যা তুলছি তাতে ভালোই মনে হচ্ছে। আমি বেশিরভাগ আলু কোল্ড স্টোরেজে রাখি। এবারও রাখব। এরপর তুলা চাষ করব।

এবার আলু চাষে কিছুটা ধকল সহ্য করতে হয়েছে উল্লেখ করে আব্দুর রাকিব আরও বলেন, এবার বেশি দামে আলুর বীজ কিনতে হয়েছে। আমরা যে দামে বীজ কিনে চাষ করি ভরা মৌসুমে তার দাম বাড়ায় সিন্ডিকেট। তাছাড়া শ্রমিক মূল্য কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। বীজ, সার ও ওষুধ সবকিছুর দাম বেশি। আশা করা হচ্ছে আলুর এই দাম থাকলে কৃষকরা বাঁচবে কিছুটা।

বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করা আলু হিমাগারে রাখা হলেও ক্ষুদ্র চাষিরা আলু বিক্রি শুরু করেছেন। বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা লায়েব আলী বলে, প্রতি বছর আলু চাষ করি। এবারও করেছি বিঘা পাঁচেক জমিতে। দাম ভালো আছে, তাই এখনই বিক্রি করে দেব।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, আলুর দামে খুশি কৃষকরা। অনেকে এবার ধান চাষ ছেড়ে আলু চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পাওয়ায় জমিতেই আলু বিক্রি করছেন কৃষকরা। রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে কার্ডিনাল আলু বেশি চাষ হয়। আমরা জানতে পেরেছি ১৩ থেকে ১৫ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এ জাতের আলু। দাম বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই আলুর চাষ বাড়বে।