Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:26 pm

আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিন

দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে একপ্রকার অস্থিরতা চলছে। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে আলুর দামও বাড়ছে হু হু করে। মূলত বাজার সিন্ডিকেটের কারণে এমন দাম বাড়ে বলে খোদ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে তারা অপারগ বলেও জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোক্তা দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজার নিয়ন্ত্রণে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘দুই দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ ১২০-১৩০, আলু ৭০ টাকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দুই দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

আমরা জানি, দেশে বছরে আলুর যে চাহিদা রয়েছে, তার চেয়ে উৎপাদন বেশি। চাহিদার অতিরিক্ত আলু উৎপাদন হওয়ায় কৃষকরা ঠিকমতো দাম পান না। অনেক সময় সড়কে আলু ফেলে প্রতিবাদ করতেও দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে আলুর সংকট হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তার ওপর আলুর সংকটের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজর দেয়া আবশ্যক বলে মনে করি। আলু দেশের প্রধান খাদ্যপণ্যের অন্যতম। এটি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তা সত্ত্বেও বাজারে কেন সংকট তা খতিয়ে দেখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদ্যোগ নেয়া উচিত। এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও উল্লেখ করেছেন যে, হিমাগার মালিক ও আড়তদারদের কারসাজিতে আলুর দাম বাড়ছে। সরকারের তরফ থেকে এমন স্বীকারোক্তি দেয়া হলেও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই।

এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভোক্তারা অসহায় হয়ে পড়বেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। কাজেই মানুষের আস্থা ধরে রাখতে সরকারের দপ্তরগুলোর তৎপরতা বাড়ানো উচিত।

অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজারেও চলছে অরাজকতা। ভারতে দাম বাড়ানো বা ভারত রপ্তানি দর বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ভারতের বাজারে যখন দাম কমে তখন দেশের বাজারে দাম কমানোর নজির চোখে পড়ে না। এক্ষেত্রেও সিন্ডিকেটের ভূমিকা রয়েছে বলেই অনুমান। বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, সত্য। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে বড় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নাগরিকদের পকেট কাটার সুযোগ পাচ্ছে। আবার সরকার আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সরকার নির্ধারিত দামে কোনো পণ্য বাজারে পাওয়া যায় না। কিন্তু বেঁধে দেয়া দাম কার্যকর হচ্ছে কি না সে বিষয়টি তদারকির জন্য কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এতে কারসাজিকারীরা আরও উৎসাহিত হন। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক জীবনে স্বস্তি আনতে সরকারের তৎপরতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করি। সংশ্লিষ্ট এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।