আলু চাষে লোকসানের শঙ্কায় রাজশাহীর কৃষক

আসাদ নূর, রাজশাহী: লাভের আশায় আলু চাষ করে লোকসানের আশঙ্কা করছেন রাজশাহীর চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই বেশ ভালো দামে আলু বিক্রি হলেও এখন আলুর দামে ধস নেমেছে। বাজারে প্রতি কেজি আলু পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে পাঁচ-ছয় টাকা। এ সবজির ব্যাপক দরপতনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এখানকার চাষিরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। জেলার তানোর, বাগমারা উপজেলায় কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয় তানোর উপজেলায় প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর।

জানা গেছে, গত বছর দফায় দফায় বন্যা ও করোনা মহামারিতে সবজিতে বেশ টান পড়ে। ফলে বাড়তে থাকে সবজির দাম। সে সঙ্গে গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় আলু চাষে ঝুঁকে এ অঞ্চলের চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি।

কিন্তু চলতি মৌসুমে আলু সংগ্রহের শুরুতেই মার খাচ্ছেন চাষিরা। প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে সাত-আট টাকায়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বাড়তে পারে আলুর দাম।

তানোর যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। এবারও চাষ করেছি। বর্তমানে আলুর যে দাম তাতে লোকসান হবে। আমি আরও ২০-২৫ দিন পর আলু তোলা শুরু করব। এখন বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে সাত-আট টাকা কেজি। এরকমভাবে দাম কমে যাবে তা ভাবা যায় না! লাভের আশায় আলু চাষ করে দেখছি লোকসান গুণতে হবে।’

একই উপজেলার পাঁচন্দর এলাকার আলু চাষি আব্দুর রাকিব বলেন, ‘গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। কিন্তু এবছর আলুর বীজ সংকট এবং দাম বেশি হওয়ায় ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ এবার প্রতি কেজি আলুতে ১১ টাকা, আর বিক্রি হচ্ছে আট টাকায়। লোকসান আরও বেশি হয় যারা জমি কন্ট্রাক্ট নিয়ে আলু চাষ করে। প্রতি বিঘায় হাল-চাষ, সার, কীটনাশক, সেচ সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আর আলু উৎপাদন হয় ৬০ কেজি হারে ৬০ থেকে ৭০ বস্তা।

আলুচাষি শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘পাঁচ-ছয় টাকা দামে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না। ব্যাপকভাবে আলু তোলা শুরু হলে দাম আরও কমে যাবে। কৃষি বিভাগ লোন দেয় না। এনজিও থেকে লোন নিয়ে আলু চাষ করেছি। এবার আলুর দামে ধরা খেলে লোন শোধ করব কীভাবে?’

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, ‘রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে আলু সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। আলুর দাম কিছুটা কমে গেছে। এখনও সম্পূর্ণ আলু উত্তোলন শুরু হয়নি। তিন সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ সংগ্রহ শুরু হবে। কোল্ড স্টোরেজে আলু যেতে শুরু করলে বাজারে আলুর দাম বাড়বে। এখন যেসব আলু সংগ্রহ করা হচ্ছে তা খাওয়ার জন্য। তবে প্রান্তিক কৃষকরা আলুর দাম কিছুটা কম পাবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০