আলু নিয়ে বিপাকে যশোরের চাষিরা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: লাভের আশায় আবাদ করা আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন যশোরের চাষিরা। দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে সংশয়, অন্যদিকে কোল্ডস্টোরেজে জায়গা না পাওয়ার শঙ্কা।

মৌসুমের শুরুতেই চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন যশোরের আলুচাষিরা। কৃষি বিভাগের দাবি, আলুর দাম বর্তমান একটু কম হলেও সামনে বেশি দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকদের ঘরোয়া পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় ১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষক তার ক্ষেতের উৎপাদিত আলুর ২৫ শতাংশ তুলে ঘরে নিতে পেরেছেন। বাকি ৭৫ শতাংশ আলু এখনও মাঠে রয়েছে। কয়েকদিন পরই এসব আলু কৃষক মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারবেন।

কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে আলু চাষের উপযুক্ত সময়ে এসে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েন এ এলাকার চাষিরা। গত ৪ ও ৫ জানুয়ারি দুদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে এ অঞ্চলের প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির আলু নষ্ট হয়। এরপর ওইসব জমিতে কৃষক দ্বিতীয় দফা আলু চাষ করেন। সব মিলে জেলায় মোট ১ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। আলু ক্ষেতে কোনো রোগবালাই না হওয়ায় ফলনও হয়েছে ভালো। তবে আলু বাজারে তোলার ঠিক উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে সংশয় আছেন তারা।

সদর উপজেলার নোঙরপুর এলাকার আলুচাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আলু চাষের ভালো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভালো ফলন পাব বলে আশা করছি। ইতোমধ্যে সামান্য পরিমাণ জমি থেকে আলু তোলা হলেও বাজারে দাম কম। প্রতি মণ আলু ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন পর ক্ষেতের আলু তোলা হবে। তবে এসব আলু সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারলে ভালো দাম পেয়ে লাভবান হওয়া সম্ভব। কিন্তু জেলার কোল্ডস্টোরেজগুলোয় আলু রাখার কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না কৃষক।’

একই কথা বলেন হৈবতরপুর এলাকার কৃষক কবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘যশোরাঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোল্ডস্টোরেজ না থাকায় এ অঞ্চলের আলুচাষিরা প্রতি বছরই লোকসান গুনে আসছেন। আলু চাষের ভরা মৌসুমে একশ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা আগেভাগে কোল্ডস্টোরেজ দখল করে রাখেন। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে সংরক্ষণ করেন। দাম বাড়লেই তা বিক্রি করে দেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরাঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এর মধ্যে যশোরে ৯টি, খুলনায় ৩টি ও সাতক্ষীরায় ২টি কোল্ডস্টোরেজ। এসব কোল্ডস্টোরেজে আলুর ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৮০ হাজার টন। অথচ এসব কোল্ডস্টোরেজ ইতোমধ্যে আলু রাখার জায়গা দখল হয়ে গেছে। একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা আগেভাগে কোল্ডস্টোরেজ বুকিং দেওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে কৃষককে নিজ উদ্যোগেই আলু সংরক্ষণের চিন্তা করতে হচ্ছে। 

জানা গেছে, আগামী মার্চ থেকে কোল্ডস্টোরেজগুলোয় আলু রাখা শুরু হবে। তবে অধিকাংশ কোল্ডস্টোরেজে আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

শরিফুল ইসলাম নামে একজন আলু ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইতোমধ্যে যশোরের দুটি কোল্ডস্টোরেজে ২২০ মণ আলু রাখার জন্য বুকিং দিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে আলুর বাজারদর কম থাকায় কোল্ডস্টোরেজগুলোয় আরও ভিড় বেশি। তাই আগেভাগে কোল্ডস্টোরেজে বুকিং দিয়ে এসেছি।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘এ বছর নানা প্রতিকূল আবহাওয়ার পরও কৃষক আলুর ভালো ফলন ফলিয়েছেন। তবে আলুর বর্তমান বাজারদর নিয়ে কৃষক সন্তুষ্ট না হলেও সামনে আলুর ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকদের ঘরোয়া পরিবেশে আলু সংরক্ষণ করে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কোল্ডস্টোরেজে জায়গা না হলেও যশোরের কৃষকরা নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় আলু সংরক্ষণ করে আসছেন। এ বছরও সেসব পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষক সামনের বাজার ধরতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০