শেয়ার বিজ ডেস্ক: বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি চর্চার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়নি; আলোচনার মাধ্যমেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে, এটাই সরকার চায়।
গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ২০২০-২১’ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে অংশগ্রহণ করে তিনি এ কথা বলেন। সূত্র: বিডিনিউজ।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা। তারা যেন নিরাপত্তা, মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে স্বভূমিতে ফিরতে পারে, সেই বন্দোবস্ত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দান এবং তারা যাতে ফিরে যেতে পারে, সে ব্যবস্থার জন্য আমরা কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি আলোচনার মাধ্যমে তারা তাদের নাগরিকদের যেন ফিরিয়ে নিয়ে
যায়। একটা বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব নিয়েই আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। তবে যারা অন্যায় করছে, নিশ্চয়ই সেটা আমরা বলব। কিন্তু তারপরও তাদের নাগরিকদের তারা ফেরত নেবে, সেটা আমরা চাই।’
বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ায় সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বলেও জানান তিনি।
‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ বঙ্গবন্ধুর দেয়া এই পররাষ্ট্রনীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই নীতিমালা অনুসরণ করেই আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে কেউই বলতে পারবে না যে, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশের বৈরী সম্পর্ক আছে। আমরা সবার সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে চলছি। বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যেরও হাত বাড়িয়েছি।’
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের কথা মনে রেখে বাংলাদেশকে আরও ‘অনেকদূর’ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যের কথাও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে এই দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি। এই দেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যুদ্ধবির্ধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আরও অনেক দূর যাওয়া।’ এজন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ২০২১-২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে? আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করব, সঙ্গে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। কিন্তু ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের প্রাচীনতম ট্রাই সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসংখ্যা প্রথম বছরে ছিল ৩০ জন, তা বেড়ে ২২৫ জনে উন্নীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের এক হাজার ২০৮ অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছেন। এই কোর্সেও ১৬টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৩ বিদেশি কর্মকর্তাসহ সশস্ত্র বাহিনীর ২২৫ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে পিএসসি অর্জন করছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন বলে উল্লেখ করে সরকার যেন দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং দেশের ভাবমূর্তি যেন উজ্জ্বল হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে তাদের কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশাবাদী, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ তার শিক্ষা-প্রশিক্ষণের উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। এ প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে দেশকে একটি স্থিতিশীল, টেকসই, আত্মনির্ভরশীল ও সর্বোপরি গৌরবময় অবস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
মুজিববর্ষে সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা, ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষের একটা ঠিকানা হবে। প্রতি ঘরে আলো জ্বলবে। প্রত্যেকটি মানুষ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবে, উন্নত জীবন পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে এবং প্রতিটি গ্রামই শহরে রূপান্তর হবে। প্রত্যেকে নাগরিক সুবিধা একবারে গ্রামে বসে পাবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, এটা করা খুব কঠিন কাজ নয়। এটা করা সম্ভব। আমি তো চিরদিন থাকব না, কিন্তু পরিকল্পনাটা দিয়ে যাচ্ছি।’
মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স প্রান্তে এই সময় ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমানডেন্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।