প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
বর্তমানে পুঁজিবাজারের শেয়ারদর তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এ সময় নতুন বা বিদেশি বিনিয়োগ যেভাবে আসার কথা সেভাবে আসছে না। কেন আমরা বিদেশিদের পুঁজিবাজারে আকৃষ্ট করতে পারছি না, সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়। দেশের পুঁজিবাজার ব্যাংক নির্ভরশীল, যা কখনোই হওয়া উচিত না। আর ব্যাংকের টাকা দিয়ে কখনোই পুঁজিবাজারের মূলধন ট্রিলিয়নের হিসেবে আনা সম্ভব নয়। বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা থাকতে হবে, যা আমরা বিভিন্নভাবে নষ্ট করছি। এখানে সুশাসনের ব্যাপক অভাব রয়েই গেছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মো. ছায়েদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন এনবিইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ এবং সিটি ক্যাপিটাল লিমিটেডের এমডি ও সিইও এরশাদ হোসেন।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটেগরির কোম্পানিগুলোর কারণে সূচক সম্পর্কে ভুল ধারণা পাই। এ কোম্পানিগুলোর কারণে পুঁজিবাজারের যে ব্যাপক সম্ভাবনা সেটি ব্যাহত হচ্ছে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ট্রিলিয়নে চলে গিয়েছে অথচ তাদের তুলনায় আমাদের বাজার মূলধন একেবারেই কম। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বাজার ভালো করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে পুঁজিবাজারে একটি ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। দেশের বাজার যেহেতু গুজবভিত্তিক তাই এখানে স্বল্পমেয়াদি একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের ওপর আস্থা কমে যাবার কারণে কিছু মানুষের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার প্রবণতা তৈরি হবে। তাছাড়া বর্তমানে পুঁজিবাজারের শেয়ার দর আগের তুলোনায় কম আছে। আর এমন সময় তো নতুন বা বিদেশি বিনিয়োগ আসার কথা কিন্তু সেভাবে আসছে না। কেন আমরা বিদেশিদের এ দিকে আকৃষ্ট করতে পারছি না, সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়। দেশের পুঁজিবাজার ব্যাংক নির্ভরশীল যা কখনোই হওয়া উচিত ছিল না। আর ব্যাংকের টাকা দিয়ে কখনোই পুঁজিবাজারের মূলধন ট্রিলিয়নের হিসাবে আনা সম্ভব নয়। বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা থাকতে হবে, যা আমরা বিভিন্নভাবে নষ্ট করছি। এখানে সুশাসনের ব্যাপক অভাব রয়েই গেছে।
এরশাদ হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন নিম্নমুখী প্রবণতা থেকে পুঁজিবাজার গত তিন-চার দিন ধরে ইতিবাচক ধারায় এসেছে। এই তিন-চার দিনে সূচক ৩০০ থেকে ৩৫০ পয়েন্টের মতো বেড়েছে এবং এটি বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাজারে ফান্ডামেন্টালভিত্তিক বিনিয়োগ না করে টেকনিক্যালভিত্তিক বিনিয়োগ করা ভালো। টেকনিক্যালভিত্তিক বিনিয়োগ করলে আমার মনে হয় এ বছর পুঁজিবাজার ভালো করবে। তাছাড়া সামনে রোজার মাস ও নির্বাচনের বছর। আর রমজান মাসে বাজার এমনিতেই একটু ধীরগতিতে চলে। অন্যদিকে ফিক্সড ডিপোজিট রেট কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কমবে না। কারণ সরকারি খাতে যে ডিপোজিটগুলো আছে সেগুলো ম্যাচিউর্ড করতে হবে এবং তখন ওগুলোই ধীরে ধীরে আসবে বেসরকারি খাতে। সঞ্চয়পত্রের রেট ১১ শতাংশ এবং সেটি বেসরকারি ব্যাংক খাতে আসতে সময় লাগবে। সব মিলিয়ে এ বছরটি নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। তিনি বলেন, গত তিন-চার মাস বাজারের ব্যাপক পতন হয়েছে। যে কারণে মার্কেট পিই ১৭ থেকে ১৬ তে নেমে এসেছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। কারণ বিদেশিরা ভ্যালুয়েশন দেখে যে, কখন তারা বিনিয়োগ করবে। ফলে ভ্যালুয়েশন যখন নিচের দিকে থাকে তখন তারা বিনিয়োগ করে। আর একটি বিষয় হচ্ছে, এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বাজারে একটি উল্লম্ফন ঘটতে পারে। কারণ যে কোম্পানিগুলো জুন ক্লোজিংয়ে আছে সেগুলোর আর্নিং রিপোর্ট আসবে এবং তার সঙ্গে ডিভিডেন্ড ঘোষণার একটি ইস্যু জড়িত থাকবে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম
