নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ভারতের আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক উন্নয়নে দুই দেশের অংশীদারদের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এর আওতায় তিনটি পর্যায়ের মধ্যে দুটি পর্যায়ে ওই মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হলো। এছাড়া আরও শেষ পর্যায়ের কাজের জন্য আলাদা চুক্তি সই হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে মহাসড়কটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের এফকন ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স লিমিটেড, বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং অর্থ ঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংকের ভারত শাখার মধ্যে এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়।
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের উপস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের স্ব স্ব প্রতিনিধিরা চুক্তিপত্রে সই করেন। ‘চার লেন বিশিষ্ট আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-দারকার-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক উন্নীতকরণে জাতীয় মহাসড়ক’ শীর্ষক এ প্রকল্পে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থ লোন দেবে এক্সিম ব্যাংকের ভারত শাখা।
প্রথম ধাপে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৫ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা। আর রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে আরও ১৯ দশমিক এক কোটি টাকা। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধাপে দারকার থেকে সরাইল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৭৩ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। এ অংশে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা। আর পুরো প্রকল্পটির পরামর্শকবিষয়ক খাতে পাঁচ বছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ দারকার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিশ্বে বিরল। দুই দেশের ছিটমহল বিনিময় থেকেই তা দেখা যায়। এত শান্তিপূর্ণভাবে এই ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে, যা বিশাল এক অর্জন। বিশ্বে বিরল নজির। উভয় দেশের মধ্যে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। সমস্যার সমাধানে আমরা দুই পক্ষই কাজ করছি। সব থেকে বড় কথা দু’দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভালো। এতে সমস্যার সমাধানে পথ সুগম হয়। আজ (গতকাল) যে কাজের চুক্তি হলো তার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। আজ দুটি ধাপের কাজের উদ্বোধন হলো। যারা এ কাজটি করছে ভারতের প্রতিষ্ঠান। তাদের বেশ সুনাম রয়েছে। আমি আশা করি, তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গুণগত মান ঠিক রেখে কাজটি সম্পন্ন করবে।’
রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, ‘ভারতের বহির্বিশ্বের সঙ্গে সর্বাধিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাংলাদেশের সঙ্গে। প্রায় ৪৬টি প্রকল্প আমরা দু’দেশ মিলে বাস্তবায়ন করছি। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রকল্প আছে রেলওয়ে নিয়ে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার। ভারত প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের এ লক্ষ্য অর্জনে সবসময় পাশে থাকবে। এ সড়ক নির্মাণ চুক্তি সই পাশে থাকারই এক নজির।’
অনুষ্ঠানে উভয় দেশের সরকারি-বেসরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।