আশুগঞ্জ নদীবন্দর স্থাপনে ব্যয় বাড়ছে ৩৫ শতাংশ

ইসমাইল আলী: নৌপথে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে স্থাপন করা হচ্ছে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদী বন্দর। ২০১১ সালে প্রকল্পটি নেয়া হলেও ভুল পরিকল্পনার কারণে তা বাতিল করা হয়। ২০১৮ সালে পুনরায় একই প্রকল্প নেয়া হলেও দেখা দেয় নানা জটিলতা। বেশকিছু পরিবর্তন আনতে হচ্ছে প্রকল্প পরিকল্পনায়। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না প্রকল্প বাস্তবায়ন। ফলে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদী বন্দর স্থাপন ব্যয় বাড়ছে ৩৫ শতাংশেরও বেশি।

এরই মধ্যে প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদী বন্দর স্থাপন ব্যয় বাড়ছে ৪৮৩ কোটি টাকা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

আরডিপিপির তথ্যমতে, আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদী বন্দর স্থাপনে ২০১৮ সালে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ হিসাবে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ৩৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ ব্যয় বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ পিইসি বৈঠকে তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, আশুগঞ্জ বন্দরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক জাহাজ আসে এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কার্গো ও প্যাসেঞ্জার লোড/আনলোড হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট ও ট্রেড প্রটোকল চুক্তির অধীনে আশুগঞ্জকে ‘পোট অব কল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বন্দরটির খসড়া ডিজাইনের ওপর প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। তবে বর্তমানে বিস্তারিত ডিজাইনের ফলে বেশকিছু নতুন অঙ্গ সংযোজন, বিদ্যমান কিছু অঙ্গের খাত পরিবর্তন ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি ঘটেছে। এ জন্য প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পটির আওতায় ১২ দশমিক ৮৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সিভিল ওয়ার্ক (কমন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফ্যাসিলিটিজ, পোর্ট ওয়ার্ক, কার্গো টার্মিনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার), ডিজাইন ও নির্মাণকাজের তদারকির পরামর্শক ব্যয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটির জনবল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, পিজিসিবির টাওয়ার প্রতিস্থাপন, বিভিন্ন পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তর, স্যান্ড পাইলিং, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ ব্যয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি, নদীর তীর ও সাইড সেøাপ প্রতিরক্ষার জন্য শিট পাইল ইত্যাদি কারণেও ব্যয় বাড়ছে।

জানতে চাইলে বৈঠকে সভাপতিত্বকারী পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব যাচাইয়ের  জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে কারিগরি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই কমিটি বিভিন্ন অঙ্গভিত্তিক ব্যয় পুনঃপরীক্ষাপূর্বক যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করবে। তার ভিত্তিতে আরডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হবে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আশুগঞ্জ দিয়ে নদীপথে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারের জন্য আশুগঞ্জকে একটি ট্রানশিপমেন্ট বন্দরে পরিণত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ২৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছর মেয়াদে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নৌবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন হয়।

বাংলাদেশ-ভারত স্বাক্ষরিত যৌথ ইশতেহারের একটি অন্যতম প্রকল্প ছিল এটি। প্রকল্পটির জন্য ভারতের ২১৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল। আর বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হতো ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। তবে বিস্তারিত সমীক্ষা না থাকায় প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ভারত সরকারের মঞ্জুরি সহায়তায় ওয়াপকোস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দ্বারা আশুগঞ্জের কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ধারণাগত ড্রইং ডিজাইনসহ প্রকল্পটির ওপর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। পরে ২০১১ সালের অনুমোদিত প্রকল্পটি বাতিল করে নতুনভাবে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ঋণেই দ্বিতীয় এলওসির আওতায় এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রস্তাব করা হয়। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ৪৩১ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ৮৬২ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। অগ্রগতি কম হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতের ঋণ দেয়ার কথা ৭৩৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে এক হাজার ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০