নিজস্ব প্রতিবেদক: গুজব ছড়িয়ে সোমবার আশুলিয়ায় সহিংসতা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সেখানে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের মধ্যে ঢুকে অনুপ্রবেশকারীরা গুলি চালিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে আশুলিয়ার ঘটনা নিয়ে কথা বলেন শ্রম উপদেষ্টা। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও ছিলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়েছে, দুই শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছেÑএ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়।’ এই গুজব থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের মধ্যে অবস্থান নেয়া অনুপ্রবেশকারীরা গুলিও ছুড়েছে।’ সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জিরাবো এলাকার মণ্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ওই সময় টঙ্গাবাড়ী এলাকার ম্যাংগো টেক্স লিমিটেডের সুইং অপারেটর কাউসার হোসেন খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এছাড়া গুলিবিদ্ধ ও আহত হন আরও কয়েকজন শ্রমিক। প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা জানান, সকালে মণ্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠক চলছিল। সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। তখন উত্তেজিত ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা র?্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা শুরু করলে অর্ধশত শ্রমিক আহত হন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, পরে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হলে পড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায়। এ সময় দুজন গুলিবিদ্ধ হন। শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে। পরে শ্রমিকদের মধ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীরা গুলি ছোড়ে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ জন আহত হন। এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘পুরো ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এর পরই পরিস্থিতির অবনতি হয়।’
উসকানিদাতা ও অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি। আশুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দেয়ার নির্দেশ দেয়া আছে। একই সঙ্গে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে মডারেটর হিসেবে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।’ নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আহত শ্রমিকদেরও সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবারও বাইপাইল এলাকায় বেশ কিছু শ্রমিক বেতন-ভাতার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দু-তিনটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে রাস্তায় নেমেছেন। এসব গার্মেন্টের মালিকরা এখন পলাতক রয়েছেন। ‘যেসব মালিক প্রতিশ্রুতি দিয়েও শ্রমিকদের দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের ব্যাপারে কাজ করছেন না, তাদের ব্যাপারে আগেও বলেছি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা।’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান শ্রম উপদেষ্টা।