কে এম রুবেল, ফরিদপুর : বঙ্গবন্ধুকন্যা সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন। বাসিন্দাদের জীবনমানের পরিবর্তন শুরু করেছে ফরিদপুরে পাঁচ হাজার পরিবার। আগমীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে তৃতীয় পর্যায়ে সারা দেশে গৃহহীনদের মধ্যে কবুলিয়ত, জমির খতিয়ান, গৃহ প্রদানের সনদসহ ঘরের চাবি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এ দিন ফরিদপুরের ৯ উপজেলায় ৪৫৩ জন তাদের গৃহ বুঝে পাবেন।
ফরিদপুর জেলায় ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৭৫৬ হতদরিদ্র, গৃহহীন পরিবারে তাদের নিজস্ব আবাসনের সুবিধা পেয়েছেন। এখন তাদের সময় বদলেছে-পরিবর্তন হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষের যাপিত জীবনের।
সরেজমিনে সালথা ও নগরকান্দা উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতিরা বসবাস করছে রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের আধাপাকা বাড়িতে। সেই বাড়িতেই করছে শাকসবজির আবাদ। কেউবা করছে হাঁস মুরগি-ছাগল-গরু পালন। সন্তানদের পাঠাচ্ছে স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। বসবাসের জন্য সরকারের দেয়া এ সুবিধাটি পেয়ে খুশি আশ্রয়হীন মানুষ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় পর্যায়ের দুই শতাংশ জমি ছাড়াও এক একটি গৃহ নির্মাণে জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
জেলার সালথা উপজেলার বড়লক্ষণদিয়া এলাকার আশ্রয়ণের বাসিন্দা আরজিনা বেগম জানান, ‘নিজের ঠিকানা পেয়েছি, আগে থাকার জায়গা ছিল না, বাসা ভাড়া করে জীবন চলত। সন্তানদের স্কুলে পাঠাব ভাবতে পারিনি। এখন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি, নিজের হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, সত্যই এটা স্বপ্নের।’
একই কথা জানালেন নগরকান্দার মাঝিকান্দা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আসমা পারভিন। তিনি জানালেন, আমি ও আমার স্বামী ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। যে বেতন পেতাম তা দিয়ে বাসা ভাড়া ও সংসার খরচ করে কিছু থাকত না। এখন এখানে ঘর পেয়েছি। স্বামী কৃষিকাজ করে, আমি হাস-মুরগি পালন করছি। মাস শেষে কিছু টাকা জমা করতে পারছি। একটি ছেলে তাকে স্কুলে ভর্তি করব। এখন বেশ ভালো আছি।
কথা হয় সালথা ইউএনও তাসলিমা আকতার ও নগরকান্দা ইউএনও ইমাম আল রাজি টুলুর সঙ্গে। এ কর্মকর্তারা জানালেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছে, আমরা সরকারে পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি, এই প্রকল্প পৃথিবীতে একটি রোল মডেল। কারণ এভাবে কোনো দেশে অশ্রয়হীনদের জন্য সরকারিভাবে নিরাপদ ছাদ তৈরি ব্যবস্থা করা হয়নি।’
জেলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দ ও কাজের আগ্রগতির বিষয়ে কথা হয় জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। ইতোমধ্যে জেলা ৯৫ শতাংশ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে যেমন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তেমন এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, হতদরিদ্ররা তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে।’