আসন্ন বাজেটের লক্ষ্য অর্জন হবে চ্যালেঞ্জের

২০১৯-২০ সালের অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি অর্জন করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এনবিআরের এ চ্যালেঞ্জ আরও ১০ বছর আগে নেওয়া উচিত ছিল। আবার দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলায় অনেক উন্নতি হলেও সেখানে এনবিআরের শাখা অনুপস্থিত। তাই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রত্যেক উপজেলায় এর শাখা করা উচিত। গতকাল বিষয়টি এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ এবং আয়কর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৯- ২০ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। এ বাজেটে জিডিপির পাঁচ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে; যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা এবং বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক, সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে আসবে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা। আসলে এ টার্গেট প্রতিবছর বাজেটেই করা হয়। একটি বিল্ডিং বানাতে প্রাথমিক অবস্থায় আর্কিটেকচারের প্রয়োজন হয় এবং সেই আর্কিটেকচারের ডিজাইন অনুযায়ী বিল্ডিং বানানোর পরিকল্পনা করা হয়। তেমনি বাজেটও সেভাবে করা হয়। কিন্তু গত ৪৮ বছর ধরে ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার ডিজাইন সঠিকভাবে তৈরি করতে পারেনি। যেমন, ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নেওয়া হবে, সঞ্চয়পত্র ও বন্ড থেকে কত টাকা সংগ্রহ করা হবে। এটি হচ্ছে ফাইন্যান্সিয়াল খাতের একটি অংশ। ব্যাংক ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ ঋণ সরবরাহ করতে পারে; কিন্তু সে ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঋণ সরবরাহ করা হচ্ছে। বন্ড মার্কেট থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ঋণ নিতে পারে এবং ক্যাপিটাল মার্কেট থেকেও নিতে পারে। এখন তেমন বন্ড মার্কেট নেই এবং পুঁজিবাজারও নড়বড়ে। আবার এ বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি এনবিআরের বড় চ্যালেঞ্জ। আসলে এনবিআরের এ চ্যালেঞ্জ আরও ১০ বছর আগে নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলার অনেক উন্নতি হয়েছে; কিন্তু সেখানে এনবিআরের শাখা অনুপস্থিত। আবার জেলায় এনবিআরের যে শাখাগুলো রয়েছে, তা কুঁড়েঘরের মতো। আসলে এটি কোনোমতেই কাম্য নয়। এটি এনবিআরের ভালো করে দেখা উচিত। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে প্রত্যেক উপজেলায় এনবিআরের নিজস্ব আধুনিক শাখা করা উচিত। ফলে একদিকে এর শাখা বাড়বে, অন্যদিকে কর প্রদানের হারও বাড়বে। আবার বর্তমানে এনবিআরে লোকবলের অনেক অভাব রয়েছে। তাই লোকবলও বাড়াতে হবে। কিন্তু এটি রাতারাতি করা যাবে না; তবে পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং করের আওতা সম্প্রসারণ করতে হবে।
অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেছেন করের আওতায় ৮০ লাখ লোক আনা হবে এবং আরও বলেছেন, যারা বিদ্যমান করদাতা রয়েছেন, তাদের ওপর আর করের বাড়তি চাপ দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাজেট সম্পর্কিত একটি আইন পাস করা হয়, যাকে বলা হয় অর্থবিল। এ অর্থবিলে করের যে চ্যাপ্টার রয়েছে, সেখানে শুরুতেই দেখা গেছে বিদ্যমান করদাতার ওপর আরও করের বাড়তি চাপ রয়েছে। যেমন, এ বিল পাসের আগে বিদ্যমান যে আইন ছিল সেখানে যদি কোনো কোম্পানি তাদের বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস দেয়, সেক্ষেত্রে ওই ১০ শতাংশ বোনাস খরচ হিসাবে ধরা হতো। কিন্তু এবারের বাজেটে যেটি করা হলো, যারা ১০ শতাংশ বোনাস দেবেন, তাদের কর দিতে হবে। আগে ১০ শতাংশ বোনাসের ওপর কর দিতে হতো না; এখন ১০ শতাংশ বোনাসের ওপর কর দেওয়ার পর আবার কোম্পানিকে ৩৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এটি আসলে কাম্য নয়।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০