এইচএসসির পর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধের খবর ফলাও করে ছাপা হওয়াটা রীতি। উল্টোদিকে, ভর্তিযুদ্ধ শেষে কতগুলো আসন খালি থাকলো, সে বিষয়ে মিডিয়া তুলনামূলক নীরব। গতকালের শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে। এতে বলা হয়েছে, তীব্র ভর্তিযুদ্ধের পরও দেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন খালি থাকছে। এগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর যথাক্রমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্বেগের বিষয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খালি আসনের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী যে কমছে, এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। এর কারণ হিসেবে অভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতির নীতি অনুসরণ না করা এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদার বাইরের বিষয়গুলোকে দায়ী করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, এগুলোর বাইরে আসন খালি থাকার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে প্রয়োজন যাচাই না করে আসনসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে আসন বাড়াচ্ছে। দেশে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য কয়টি আসন প্রয়োজন, সে হিসাব সম্ভবত কারও কাছে নেই। এমনকি ইউজিসির কাছেও বোধহয় নেই। স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর পার করেছি আমরা। এ দীর্ঘ সময়ে কখন কোন সেক্টরে কী পরিমাণ দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন, সে হিসাব না করে ইচ্ছামতো আসন বাড়িয়ে সংখ্যাগত ক্ষেত্র বাড়ানোর প্রয়াস অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই রয়েছে। আজ আসনসংখ্যা পূরণ না হওয়ায় প্রতিবেদনটিতে এরকম কিছু বিষয় উঠে এসেছে; কিন্তু এখন সময় এসেছে মূল কারণ চিহ্নিত করে সে অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখন ভর্তি পরীক্ষা নেয়, সেটিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা কোনো র্যাংকিং না থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিজেদের একটি পছন্দক্রম রয়েছে। এর শীর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নতুন; ঢাকা, রাজশাহী বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অবস্থানে যেতে এর আরও সময় প্রয়োজন। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার সঙ্গে একই দিনে বিকেলে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। স্বভাবতই সেখানে যারা টেকে, তারা পরবর্তী সময়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলে চলে যায়। উদাহরণটি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও প্রযোজ্য। ইউজিসি একবার উদ্যোগ নিয়েছিল এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং করার। এরকম একটি র্যাংকিং থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে মোতাবেক ক্রমানুসারে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারতো। এতে আসন খালি থাকার সম্ভাবনাও অনেকটা কমে যেত। অন্যদিকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নির্দিষ্ট সময় পর শিক্ষার্থীদের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি বন্ধ করা যায় কি না, তাও ভাবার বিষয়। তবে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বের করা হোক আসন খালি থাকার মূল কারণগুলো। সেক্ষেত্রেই কেবল লাগসই সমাধানের খোঁজ পাওয়া সম্ভব হবে।
Add Comment