আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা থেকে বাদ ১৯ লাখ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যর প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকায় (এনআরসি) চূড়ান্তভাবে ঠাঁই হয়েছে তিন কোটি ১১ লাখ মানুষের। গতকাল শনিবার সকালে প্রকাশিত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ছয় হাজার মানুষ। তবে নাগরিকত্ব প্রমাণে আপিলের সুযোগ রয়েছে তাদের সবার। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিদেশি বলা যাবে না। এমনকি এ সময়ের মধ্যে তারা অন্য কোথাও যেতেও পারবেন না। খবর: এনডিটিভি।
১২০ দিনের ভেতরে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে হবে তাদের। যদিও আগের চেয়ে আপিল করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে চূড়ান্ত ঘোষণাতে। আগে ৬০ দিনের ভেতরে আপিল করতে হতো। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাদ পড়াদের আপিল শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলা হবে। এছাড়া যদি কেউ ট্রাইব্যুনালে আপিল করে ব্যর্থ হন, তাহলে সর্বোচ্চ আদালতেও যেতে পারবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে আসামে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও ভারত কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী শনাক্তকরণে এ প্রক্রিয়া প্রয়োজনীয়।
এদিকে, চূড়ান্ত নাগরিকত্ব তালিকা ঘোষণা ঘিরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যজুড়ে কয়েক হাজার আধা-সামরিক বাহিনী এবং পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। থমথমে পরিস্থিতি। একসঙ্গে চারজনের বেশি জটলায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আসাম রাজ্য সরকার জানিয়েছে, যারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে, নাগরিকত্ব প্রমাণে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল গত শুক্রবার এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যারা বাদ পড়বেন, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
এর আগে রাজ্যটির এনআরসির প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন ৪০ লাখ ৭০ হাজার ‘বাঙালি বসবাসকারী’। এ হিসেবে চূড়ান্ত ঘোষণাতে আশঙ্কা করা হয়েছিল ৪১ লাখের মতো মানুষ বাদ পড়তে পারেন।
১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তিতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির কথা বলা ছিল। ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নাগরিকপঞ্জি তৈরি করা হয়ে ওঠেনি। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসি তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়। গোটা রাজ্যে খোলা হয় দুই হাজার ৫০০টি এনআরসি সেবাকেন্দ্র। ৫২ হাজার সরকারি কর্মী নিযুক্ত হন নাগরিক তালিকা তৈরির কাজে। খরচ হয় এক হাজার ২২০ কোটি রুপি। নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলার জন্য মোট আবেদন জমা পড়ে তিন কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪। চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় স্থান হয় দুই কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭ জনের। বাতিলের তালিকায় ঠাঁই হয় ৪০ লাখ সাত হাজার ৭০৭ জনের। পরে বাদ দেওয়া হয় আরও এক লাখ দুই হাজার ৪৬৫ জনকে।
চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর রাজ্যটির অর্থমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, এনআরসি নিয়ে বিজেপি সন্তুষ্ট নয়। তিনি দাবি করেছেন, আরও বেশি অবৈধ অভিবাসীর তালিকা থেকে বাদ পড়ার কথা। রাজ্য থেকে সব বিদেশিদের তাড়িয়ে দিতে তাদের দল কাজ করে যাবে। হিমন্ত শর্মা জানান, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর নাগরিক তালিকায় পুনরায় যাচাইয়ের বিজেপি ও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাবে।
বিজেপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পরে জানা যাবে উল্লেখ করে শর্মা জানিয়েছেন, আদিবাসীদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন অনেকেই এ প্রক্রিয়ার ফলাফলে অসস্তুষ্ট।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০