আসুন জানি স্কেলোরোডার্মা সম্পর্কে

মানুষের শরীরে যে ছয় শতাধিক বাতরোগ হতে পারে, তার মধ্যে স্কেলোরোডার্মা অন্যতম। ‘স্কেলোরো’ শব্দের অর্থ শক্ত, ‘ডার্মা’ শব্দের অর্থ ত্বক বা চামড়া। স্কেলোরোডার্মা’র অর্থ ‘শক্ত ত্বক বা চামড়া’। এ রোগে সাধারণত ত্বক বা চামড়া শক্ত হয়ে যায়; তবে ত্বকের পাশাপাশি এ রোগে শরীরের মধ্যকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হলে তাকে ‘সিস্টেমিক স্কেলোরোসিস’ বলে।
গত ৩০ জুন ‘বিশ্ব স্কেলোরোডার্মা দিবস’ উপলক্ষে সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা জানান। চিকিৎসকরা জানান, এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি রোগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রিউমাটোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে রোগীদের সঙ্গে সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
আমাদের শরীরের নিজস্ব একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যা নিজ থেকেই শরীরকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হঠাৎ যখন পাগলামি শুরু করে, নিজেই নিজের শরীরকে আক্রমণ করে বসে, তখন এ জাতীয় রোগ হয়। এ রোগের সঠিক কোনো কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি।

উপসর্গ
শুরুতে হাত-পায়ের পাতা ও ওপরের তালুসহ আঙুলগুলো ফুলে যায়, এরপর চামড়া ধীরে ধীরে মোটা হয়। শক্ত হওয়া শুরু করে। কারও ক্ষেত্রে এটি হাতের কনুই ও হাঁটু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, কারও ক্ষেত্রে এটি কনুই ও হাঁটুর উপরিভাগসহ মুখমণ্ডল, বুক ও পিঠের চামড়াও আক্রান্ত করতে পারে। পরবর্তী সময়ে আঙুলের মাথাগুলো চিকন হয়ে যেতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে আঙুলের মাথায় ঘা হতে পারে। এ রোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ঠাণ্ডা পানি বা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অথবা মানসিক বিষন্নতায় হাতের আঙুল নীল ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কেউ কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে ত্বকের পাশাপাশি অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও সংক্রমণের শিকার হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, কিডনি, অন্ত্র প্রভৃতি। কারও আবার ত্বক সংক্রমণ না করেও ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে গিরায় গিরায় ব্যথা হতে পারে। ফুসফুস আক্রান্ত হলে রোগীরা সাধারণত অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠেন; সে সঙ্গে খুসখুসে কাশিও হতে পারে। খাদ্যনালি ও পাকস্থলি আক্রান্ত হলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে, গলায় খাবার উঠে আসতে পারে প্রভৃতি। অন্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট হওয়া, কিডনি-জনিত সমস্যার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি।
স্কেলোরোডার্মা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। ফলে রোগীরা নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকেন। এ রোগের চিকিৎসাব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি। সঠিক সময় রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসা রোগীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে। বিএসএমএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগ প্রতি বুধবার স্কেলোরোডার্মা ক্লিনিকের ব্যবস্থা করে থাকে, যেখানে শুধু স্কেলোরোডার্মা রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

সুুস্বাস্থ্য ডেস্ক

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০