মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : ব্যাকরণগত দিক থেকে বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে বিনিয়োগযোগ্য। কিন্তু এরপরও পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের। বিভিন্ন ধরনের গুজবে আস্থাহীনতায় ভুগছেন তারা। যে কারণে বাজার তার স্বাভাবিক গতি পাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, খাতভিত্তিক বিবেচনায় বর্তমান ব্যাংক, জ্বালানি ও শক্তি এবং বিমা খাতের ১২৫ কোম্পানির গড়মূল্য আয় অনুপাত ১৫-এর নিচে অবস্থান করছে। এর মধ্যে ব্যাংকের পিই রেশিও অবস্থান করছে আট দশমিক ৯ পয়েন্টে। ব্যাকরণসম্মত এমন পিই থাকা অবস্থায় বিনিয়োগ হয় জুুতসই। এছাড়া জ্বালানি ও শক্তি খাতের পিই রয়েছে ১২ পয়েন্টে। একইভাবে বিমা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর পিই রেশিও অবস্থান করছে ১২ দশমিক তিন পয়েন্টে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমানে যে গড় পিই রয়েছে, তা যে কোনো বাজারের জন্য ভালো। অর্থনীতিতে ২৩-২৪-এর উপরে মার্কেট পিই চলে গেলে তখন সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। বাইরের দেশগুলোতে এ নীতি মেনে চলা হয়। তবে আমাদের দেশে কোয়ালিটি সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। তাই আমাদের পিই ২০ এর উপরে গেলেই বিবিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়া উচিত।’
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজারে এখন বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে। কিন্তু তারপরও এই বাজারেরর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা দেখা যাচ্ছে না। এর মূল কারণ মনোগত। মূল্য আয় অনুপাত এই অবস্থায় থাকাকালীন শেয়ার ক্রয় করলে সেখান থেকে লাভ করার সুযোগ থাকে। তারা জানান, পৃথিবীর সব স্থিতিশীল বাজারেও কিছু অতি মূল্যায়িত অথবা সুযোগসন্ধানী প্রতিষ্ঠান থাকে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত সাবধানী হয়ে বিনিয়োগ করা।
প্রসঙ্গত বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের গড় পিই রেশিও বা মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে ১৬ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে। ২০১০ সালের বাজারের গড় পিই রেশিওর তুলনায় যার প্রার্থক্য প্রায় ১৪। এর সঙ্গে বর্তমান বাজারে অতি মূল্যায়িত শেয়ার সংখ্যা সীমিত। যা স্থিতিশীল বাজারের পূর্ব শর্ত। নিয়ম অনুযায়ী ২৫ এর উপরে পিই অবস্থান করলে সেই মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে নভেম্বর মাসের শেষে তালিকাভুক্ত কোম্পানির গড় পিই রেশিও ছিল ২৯ দশমিক ৭১, যা ছিল বিগত বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত তখন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ৪০ এর উপরে চলে যাওয়ায় গড় পিইর অবস্থা এমন হয়। যার জের ধরে পুঁজিবাজারে সর্বকালের মহাধস নেমে আসে। তখন অগ্নিমূল্যে শেয়ার কিনে পথে বসেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। যার ফল এখনও ভোগ করছেন তারা।
শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত কী : ব্যাকরণগতভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে গেলে শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও বিবেচনায় আনা জরুরি। এটা ২০ এর কম হওয়া ভালো। আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী পিই ২৫-এর উপরে গেলে সেই শেয়ার ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত কম হয়, বিনিয়োগে ঝুঁকি তত কম। মূল্য-আয় অনুপাত হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপ। কোনো কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় যদি হয় পাঁচ টাকা, আর বাজারে শেয়ারটির দাম থাকে ৪৫ টাকা, তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত হবে ৯। এর অর্থ কোম্পানিটি যদি তার আয়ের পুরোটা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে দেয় তাহলে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পেতে ৯ বছর সময় লাগবে। কিন্তু শেয়ারটির বাজারমূল্য যদি
হতো ১০০ টাকা, তাহলে মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়াতো ২০। অর্থাৎ কোম্পানির আয়ের ধারা অপরিবর্তিত থাকলে বিনিয়োগে ফিরতে ২০ বছর সময় প্রয়োজন। বাংলাদেশে ৪০-এর উপর পিই গেলে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করার জন্য ওই কোম্পানির মার্জিন সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত ১৯২৯ সালে মার্কিন পুঁজিবাজারে পিই ৩৫-এর উপরে চলে যায়। আর সেই সময়ই সেখারকার পুঁজিবাজারে সর্বকালের বড় ধস নেমে আসে। একইভাবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে ৩০ এর উপরে পিই রেশিও গেলে বাজারে ধস নেমে আসে।