মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: টানা উত্থানের পর সম্প্রতি পুঁজিবাজারে টানা পতন চলছে। সূচকের সামান্য নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে পতন শুরু হলেও দিন যত যাচ্ছে চলমান পতন তত বড় হচ্ছে। পতন যত বড় হচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সম্প্রতি বড় পতন তাদের আরও ভাবিয়ে তুলছে। ফলে বাজার স্থিতিশীল হবে, এই ভেবে এতদিন যারা অপেক্ষা করছিলেন তারাও উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। তবে বাজার পতনের মূলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট কাজ করছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু বাজারে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি যার জন্য লাগাতার পতন হতে পারে। মূলত বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে পেনিক সেল করছেন, যার প্রভাবে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তাদের শেয়ার বিক্রয় চাপে বাজারে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণে পতন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাদের আস্থা বাড়লে পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে সূচকের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিক। পুঁজিবাজারে সূচক হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা সহজে বিচলিত হন। ফলে পেনিক সেল বেড়ে যায়। তাই পতন নেমে আসে। কোনো কারণে বাজারে পতন নেমে এলে ভীত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং এ সময়ে তাদের ধৈর্যের পরিচয় দেয়া উচিত।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে দেখা যায়, প্রতিদিন কমে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া একযোগে কমছে তালিকাভুক্ত সব খাতের শেয়ারদর। এর জের ধরে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার মূলধন। গত ১১ কার্যদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে কমেছে সূচকও। এ সময়ের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকও উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়েছে। ১১ কার্যদিবসের ব্যবধানে সূচক হ্রাস পেয়েছে ৪৮২ পয়েন্ট। এর মধ্যে দিয়ে সূচক আবার সাত হাজার পয়েন্টের নিচে আসে। গতকাল দিন শেষে সূচকের অবস্থান হয়েছে ছয় হাজার ৮৮৫ পয়েন্ট।
এদিকে এ পরিস্থিতিতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা, বাড়ছে ক্ষোভ। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গতকাল অস্বাভাবিক দরপতন হলে কোনো উপায়ান্তর না দেখে রাস্তায় নামেন তারা। এ সময় তারা মতিঝিলে (পুরোনো) ডিএসই ভবনের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন।
তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে সিঁদুরে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের অবস্থা করুণ হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজার-সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মন্তব্যের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। কারণ পুঁজিবাজারে এর প্রতিফলন নেই।
তারা বলেন, সম্প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন পুঁজিবাজার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। লেনদেন আর বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে বাজার-সংশ্লিষ্টদের কথার কোনো প্রভাব পড়ছে না।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজার এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যাতে বাজারের এমন পরিস্থিতি হতে পারে। মূলত এ বাজার থেকে একটি চক্র লুটপাট করার চেষ্টা করছে। বিনিয়োগকারীরা চান মার্কেট ভালো থাকুক।
এ প্রসঙ্গে ফারুখ হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, বর্তমানে বাজারে নীরব দরপতন চলছে, যা আমাদের কাম্য নয়। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের অবস্থা আরও করুণ হবে। কয়েকদিনের পতনে ইতোমধ্যে তারা বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেন এ বিনিয়োগকারী।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সিকিউরিটি হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না। এ কারণে কৃত্রিম তারল্য সংকট চলছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এর জন্য দায়ী বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। তারা অপেক্ষায় রয়েছেন আরও কম দরে শেয়ার কেনার।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন বাজার আরও ভালো হবে। আমিও তাই বিশ্বাস করি। বর্তমানে পরিস্থিতিতে বাজারের সার্বিক অবস্থা কেন এমন হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়।