Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:32 am

আয় কমলেও ব্যয় বাড়ছে সিটি ব্যাংকের

পলাশ শরিফ: স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও বড় করপোরেট ঋণের সুদহার কমায় মুনাফা কমছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় সিটি ব্যাংকের। চলতি পঞ্জিকাবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংকটির পরিচালন আয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা কমেছে। অন্যদিকে এ সময় ব্যবস্থাপনা ব্যয় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা বেড়েছে। তবে প্রভিশন কমার কারণে কর-পরবর্তী মুনাফা প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তারপরও ব্যাংকটির কর-পরবর্তী মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি পঞ্জিকাবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিটি ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যা এর আগের আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি। কিন্তু প্রকৃত সুদ আয় বাড়লেও এ সময় ব্যাংকটির পরিচালন আয় কমেছে। যার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এফডিআরের সুদহার কমে যাওয়াতেই পরিচালন আয় কমেছে বলে মনে করছে ব্যাংকটি। সুদহার কমায় তিন মাসে ব্যাংকটির বিনিয়োগ আয় প্রায় ১১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা কমেছে। এ সময় কমিশন ও অন্য পরিচালন আয় বাড়লেও বিনিয়োগ আয় কমার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিটি ব্যাংক। যে কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির পরিচালন আয় প্রায় ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কমেছে। অন্যদিকে পরিচালন আয় কমলেও এ সময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা ব্যয় প্রায় ৩৬ কোটি সাত লাখ টাকা বেড়েছে।

এ-বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এফডিআরের সুদহার কমিয়েছে। যে কারণে সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে এফডিআরসহ বিনিয়োগ আয় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। পাশাপাশি করপোরেট ঋণের সুদহারও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এটি পুরো ব্যাংক সেক্টরের জন্য একটি বড় ধাক্কা। ঋণের সুদহার কমার এ ধাক্কা সামাল দিতে আয়ের নতুন খাত তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য এসএমই ঋণসহ রিটেইল ব্যাংকিংয়ের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চলমান সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে না। এগিয়ে থাকার ধারা অব্যাহত রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে খেলাপি ঋণ কমে আসায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিটি ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণ ৯১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কমেছে। এ সময় ঋণ ও অগ্রিম হিসেবে প্রদান করা অর্থের বিপরীতে প্রায় ৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা প্রভিশন রাখা হয়েছে। যা এর আগের আর্থিক বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা কম। একইভাবে অফ-ব্যালান্স শিট এক্সপোজারের বিপরীতে প্রভিশন কমেছে প্রায় ১২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তবে এ সময় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করা শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় এর বিপরীতে ব্যাংকটির প্রভিশন কিছুটা বেড়েছে। তিন খাতের দুটিতে প্রভিশন কমানোয় দ্বিতীয় প্রান্তিকের কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বেড়ে ১৩১ কোটি ৮১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে মুনাফা কমলেও ইপিএস অপরিবর্তিত (এক টাকা ৫১ পয়সা) রয়েছে।

চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৬৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যা এর আগের (২০১৫-১৬) আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ৪৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কম। একইভাবে চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকটির প্রকৃত সুদ আয় এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ২৯ কোটি টাকা বেড়েছে। তবে সুদ আয় বাড়লেও এ সময় বিনিয়োগ আয় কমেছে প্রায় ১৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি আর্থিক বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৪২২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৭ কোটি টাকা বেশি। এক বছরের ব্যবধানে ১০ খাতের মধ্যে আটটিতেই ব্যয় বেড়েছে ব্যাংকটির।

তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সিটি ব্যাংক। ব্যাংক খাতে নানা উত্থান-পতনের মধ্যেও ব্যাংকটির কর-পরবর্তী মুনাফা বাড়ছে। সর্বশেষ সমাপ্ত আর্থিক বছরে ব্যাংকটির কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৪০৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের ছয় মাসে সিটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ১৯০ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ২৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। আয়-মুনাফায় প্রবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। গত দুবছরে ব্যাংকটির শেয়ারদর প্রায় ২৬ টাকা বেড়েছে। ডিএসইতে সর্বশেষ কার্যদিবসে গতকাল সিটি ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ার ৪৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে।