Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:28 pm

আয়-মুনাফায় এগিয়েছে আইপিডিসি

পলাশ শরিফ : সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে শক্ত অবস্থান করে নিতে ২০১৬ সালে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের কোম্পানি আইপিডিসি ফাইন্যান্স। রি-ব্র্যান্ডিংয়ের পর বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র তৈরি, সময়োপযোগী পণ্য বাজারে আনা, খেলাপি ঋণ কমানো, দক্ষ জনবল ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। এতে কোম্পানির সেবার মান ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে, যার উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে কোম্পানিটি।
২০১৮ সালে ওই খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো চাপে পড়লেও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এগিয়ে চলার ধারা অব্যাহত রয়েছে। ওই আর্থিক বছরে কোম্পানিটির আয়-মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর জন্য ২০১৮ সাল সুখকর ছিল না। পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা, ঋণ ও আমানতের সুদহারে বড় পরিবর্তন এবং খেলাপি ঋণ-প্রভিশনের কারণে আইডিএলসি ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের মতো শীর্ষ কোম্পানিগুলোর আয়-মুনাফাও কমেছে। তবে বিরূপ ব্যবসায়িক পরিস্থিতিতেও এগিয়ে চলার ধারা অব্যাহত রেখেছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স। ওই বছর কোম্পানিটির আয়, পরিচালন মুনাফা ও কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে।
২০১৭ সালে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের প্রকৃত সুদ আয় ছিল প্রায় ১০৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা ২০১৮ সালে প্রায় ১৬৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই বছর কোম্পানিটি প্রায় ১৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, যা এর আগের বছরে প্রায় ১২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ছিল। আয়-পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধির কারণে সর্বশেষ আইপিডিসি ফাইন্যান্সের কর-পরবর্তী মুনাফা ৪৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৭ সালে প্রায় ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ছিল। এ হিসেবে এক বছরে কোম্পানিটির সুদ আয় ৫৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, পরিচালন মুনাফা ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ ও কর-পরবর্তী মুনাফা ৩৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি ও সিইও মোমিনুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ২০১৬ সালে আমরা নতুনরূপে পথচলা শুরু করেছি। এজন্য নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গ্রাহকসেবার পরিধি ও মান বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বড় লক্ষ্য ছিল খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। সে সঙ্গে দক্ষ জনবল ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়ানো হয়েছে। যার প্রভাবে পণ্য-সেবার পরিধির সঙ্গে গ্রাহকের আস্থাও বেড়েছে। সে সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার দিকেও বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। আর এসব পদক্ষেপের সুফল আসতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা এগিয়ে রাখতে দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
তথ্যমতে, আশির দশকের প্রথমদিকে পথচলা শুরু হলেও আইডিএলসি ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে আইপিডিসি। ২০১৬ সালে এসে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে নতুনরূপে পথচলা শুরু করে কোম্পানিটি। দেশের আর্থিক খাতের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর জেরে বিনিয়োগের জন্য নতুন খাত বেছে নেয় আইপিডিসি। এরপর কোম্পানিটির কার্যক্রমে নতুন গতি আসে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা ৪৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের অন্যতম পুরোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স। ১৯৮১ সালে আগা খান ফান্ড ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (একেএফইডি), যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), জার্মান ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিইজি) ও যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (সিডিসি) সহায়তায় তৎকালীন সরকার এ নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
২০১৬ সালে কোম্পানিটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্র্যাক, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন ও আরএসএ ক্যাপিটাল। ওই তিন প্রতিষ্ঠান মিলে আইপিডিসির ৪০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। পথচলার ৩৫ বছর পর সম্প্রতি রি-ব্র্যান্ডিংয়ের জেরে আর্থিক খাতের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় আইপিডিসি ফাইন্যান্স। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪০ শতাংশই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া সরকারের কাছে ২১ দশমিক ৮৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে দুই দশমিক ৮৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ১০ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ শেয়ার রয়েছে।