Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:33 am

আয়-মুনাফায় ধারাবাহিকতা নেই এনভয় টেক্সটাইলের

পলাশ শরিফ:  তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে তালিকাভুক্তির পর উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বস্ত্র খাতের শীর্ষস্থানীয় এনভয় টেক্সটাইল। ২০১২ সালের পর থেকে মুনাফার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। এক অর্থবছরে আয়-মুনাফা বাড়লেও পরের অর্থবছরে কমে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও সেই অনুযায়ী রফতানি না বাড়ার কারণেই এমন উত্থান-পতন। প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে তালিকাভুক্তির সময় এনভয় টেক্সটাইলের কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এক কোটি ১৩ লাখ বেড়ে পরের অর্থবছরে তা ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় উঠেছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছরেই নি¤œমুখী ধারা দৃশ্যমান হয়েছে। ওই অর্থবছর মুনাফা ১২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কমেছিল। সে সময় ৩১ কোটি নয় লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল। এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৫৭ কোটি ১২ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। আবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়-মুনাফার গতি কিছুটা শ্লথও ছিল। উত্থান-পতনের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকে এসে আবারও হোঁচট খেয়েছে শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানটি। এ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আয়-মুনাফায় পিছিয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর অর্ধবার্ষিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিষ্ঠানটির আয় ছয় কোটি ৬৮ লাখ টাকা কমেছে। চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ অর্ধবার্ষিকে এনভয় টেক্সটাইলের আয় দাঁড়িয়েছে ২৭৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা; যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২৮৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা ছিল।তবে সরকারের তরফে বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল, বিক্রয়-বিপণন খরচ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবেই আয়-মুনাফা কমেছে। অন্যদিকে ডেনিম পণ্যের বাজারে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতাও পিছিয়ে পড়ার জন্য অনেকটা দায়ী বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলরা। অর্থবছরের শেষ নাগাদ আয় ধকল কাটিয়ে ওঠা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন তারা।
আলাপকালে আয় কমার কারণ সম্পর্কে এনভয় টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব সাইফুল ইসলাম চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে আমরা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ভালো করেছি। তবে এর আগের অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। নতুন অর্থবছরে গ্যাস-বিদ্যুতের বিলসহ বেশ কিছু খাতে খরচ বাড়ার কারণে ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু ব্যয় বাড়লেও উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় মূল্য বাড়েনি। বরং বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে। বর্তমান বিশ্ববাজার ও ব্যবসায়িক মন্দা পরিস্থিতির কারণেই আয়-মুনাফার ধারা ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আয় প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা কমলেও সর্বশেষ অর্ধবার্ষিকে এনভয় টেক্সটাইলের পরিচালন ব্যয় এক কোটি ৫১ লাখ টাকা বেড়ে ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা ব্যয় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা, অর্থনৈতিক ব্যয় চার কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বিক্রয় ও বিপণন ব্যয় ২১ লাখ টাকা বেড়েছে। নানা কারণে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা ছয় কোটি ৪৭ লাখ টাকা কমেছে।
এদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফার ওপর। সর্বশেষ অর্ধবার্ষিকে এনভয় টেক্সটাইলের কর-পরবর্তী মুনাফা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আট কোটি ২৮ লাখ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৮১ লাখ
টাকা। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৫৭ পয়সা কমে সর্বশেষ অর্ধবার্ষিকে ৮৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে; যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল এক টাকা ৪৫ পয়সা।
উল্লেখ্য, এনভয় টেক্সটাইলের প্রায় ১৫ কোটি ৬৬ লাখ শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৪৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে তিন দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে এনভয়ের প্রতিটি শেয়ার ৩৮ টাকা ৯০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। আর গত বছরের আগস্ট থেকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ধীরগতিতে বাড়ছে।