নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময় পাটের অগ্রগতি নিয়ে কোনো কাজ হয়নি, উল্টো ষড়যন্ত্র করে যা ছিল সেসব ধ্বংস করা হয়েছে। এখন রফতানির পাশাপাশি দেশে পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টি না হলে এ খাতের সঠিকভাবে বিকাশ হবে না। ফলে এখন আইন করে পাট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, পাটের জন্য ‘পাট আইন’ পাস হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টিতে আরও যা প্রয়োজন, সেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল শনিবার এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পাট খাতের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল।
সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের পাট উৎপাদনে বীজ সমস্যার সমাধানসহ পাট পচনে পানির সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে। পাটপণ্যের বাজার তৈরিতে সব জেলায় বিক্রয়কেন্দ্র করার চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া চীনের মতো দেশের কোনো একটি জেলাকে পাটপণ্য তৈরি ও বিক্রির জন্য আলাদা জোন হিসেবে তৈরি করা যায় কিনা, তা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিগত ৩০ বছরে দেশের পাট খাত যতটুকু এগিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে তার থেকে বেশি এগিয়ে যাবে। সে সময় পাট খাত বস্ত্র খাতের সমান অবদান রাখবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে পাটের নিত্যনতুন পণ্য তৈরিতে এ নিয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। পাটপণ্য প্রসারে শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। যেখানে বিদেশি পণ্য ও সেসব পণ্যের প্রচলিত ধারা সম্পর্কে জানতে পারবে দেশের উদ্যোক্তারা।
এদিকে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ে তিনি বলেন, দেশের পাট খাতের মতোই ষড়যন্ত্রের শিকার বিজেএমসি। পাট খাত ধ্বংসের যে চক্রান্ত ছিল, তারই অংশ হিসেবে বিজেএমসিতে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই এখন প্রতিষ্ঠানটি বছরে সরকারের ৬০০ কোটি টাকা লোকসান গুনছে।
তবে অর্থমন্ত্রী বললেও বিজেএমসি বন্ধ হবে না এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, এখন বিজেএমসির যৌক্তিক লোকসান মেনে নেওয়া হবে। আর দুর্নীতির কারণে তৈরি অযৌক্তিক সব লোকসান কমানো হচ্ছে। আগামী বছরই বিজেএমসির ২০০ কোটি টাকা ব্যয় কমবে। বিজেএমসি এখন সরকারের একটি ডিজেবল বা প্রতিবন্ধী সন্তানের মতো। পরিবারে একটি সন্তান প্রতিবন্ধী হলে তাকে তো ফেলে দেওয়া যায় না। তাকে লালন করে সুস্থ করা হয়। বিজেএমসিকেও তাই করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত বছর প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৭৩০ কোটি টাকা। এ বছর তা কমে হয়েছে ৬১৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে দুর্নীতি রোধের কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ২০০ কোটি টাকা কম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিষ্ঠানটির আগের অবস্থা নিয়ে মির্জা আজম বলেন, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির কারণে বিজেএমসি একেবারেই নিমজ্জিত ছিল। এ সরকারের প্রচেষ্টায় সেখান থেকে বিজেএমসিকে উদ্ধার করা হচ্ছে। বিজেএমসিও অস্তিত্ব বাঁচানোর জন্য এখন দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। সে কাজ এখন চলছে। সব পর্যায়ে এখন দুর্নীতিমুক্ত করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী উদাহরণ দিয়ে বলেন, আগে পাট ক্রয় হয়েছে নারায়ণগঞ্জে, কিন্তু কাগজপত্রে তা কুড়িগ্রাম দেখিয়ে পরিবহন খরচ বাবদ ৪০ হাজার টাকা লোপাট হয়েছে। পাটের দাম দুই হাজার টাকা, তা ক্রয় দেখানো হয়েছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। এরপরও ১০০ বেল পাট কিনে গুদামে এসেছে ৭০ বেল। শুধু তাই নয়, ওই পাট বিদেশে রফতানি হয়েছে যে টাকায়, দাম দেখানো হয়েছে তার অর্ধেক। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা হয়েছে।
গতকালের সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, পাটশিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব আনতে হবে। অন্যথায় এ শিল্পটি ব্যর্থ হবে। একই সঙ্গে মেশিনারিজগুলো নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। দেশে প্রতি বছর ২৯২ কোটি টাকার পাটবস্ত্রের প্রয়োজন হয় বলে মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।