ইআরএফ ও স্কুল অব ইকোনমিকসের সেমিনার: জনসম্পৃক্ত বাজেটের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণ নেই। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংসদেরও অংশগ্রহণ নেই। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া দরকার। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাজেট বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস ও অর্থনৈতিক রিপোর্টার্স ফোরাম যৌথভাবে ‘বাংলাদেশের ট্যারিফ কাঠামো ও খাতভিত্তিক বাজেট’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। এর সভাপতিত্ব করেন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এতে অন্যদের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজিদ, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, আইসিএবির সভাপতি মসিহ মালিক চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির সাবেক প্রিন্সিপাল কেএম জামশেদ উজ জামান, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ সময় ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তা মির্জা এএফএম তাওহিদুর রহমান ও এসএম সুমাইয়া জেবিন যৌথভাবে বাংলাদেশের ট্যারিফ কাঠামোর ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এছাড়া বাজেট বরাদ্দের প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্যাটেজিক স্টাডিজের (বিস) ভারপ্রাপ্ত গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির।

এ সময় মাহফুজ কবির তার প্রতিবেদনে বলেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে সময়ের মধ্যে বাজেটের প্রাক-প্রস্তুতির সব ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। এখন আইবাস-এর মাধ্যমে ডাটা এন্টিসহ বিভিন্ন কাজ করা হবে। কিন্তু আমাদের দেশে বাজেটের ক্ষেত্রে মূসক নিয়ে বড় দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে। এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশের সব খাতেই বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে প্রথম তিন প্রান্তিকে সব মিলে ৪৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাকি সময়ে তাড়াহুড়া করে বাকি এডিপি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলে।

তিনি বলেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেশের বাজেটের গত কয়েক বছরের বরাদ্দে কোনো সুনির্দিষ্ট গতিবিধি দেখা যাচ্ছে না। কখনও বাড়ছে। আবার কখনও কমছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি একটা ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এছাড়া বাজেটের বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপজেলার ও এলাকার মধ্যে সমতা নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ট্যারিফ কাঠামোর বিষয়ে অপর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্যের উদারীকরণের ফলে ধীরে ধীরে ট্যারিফ কমাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এজন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) অবশ্য অ্যান্টি-পাম্পিং ও কাউন্টারভেইলিং ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এ সুযোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করতে হবে। এখন বাংলাদেশের মধ্যে ইরানের একটি পিটিএ চুক্তি থাকলেও তা কার্যকর নেই। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জিএসপিসহ বিভিন্ন সুবিধা কমতে শুরু করবে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় পিটিএ হবে গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

এ বিষয়ে আলোচনায় ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, এনবিআর আর ট্যারিফ কমিশনের মধ্যে যোগাযোগের সমস্যা আছে। আমাদের রফতানির ক্ষেত্রে দুটো নীতি আছে। একটা ট্যারিফ পলিসি, অপরটি এক্সচেঞ্জ রেট পলিসি। দুটোই হচ্ছে রফতানিবিরোধী। অথচ আমরা রফতানি বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি। এ নিয়ে জটিলতা আছে। এ বিষয়ে খাতভিত্তিক আলাদা আলদা নীতি গ্রহণ করা জরুরি।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবদুল মজীদ বলেন, এডিপির বাস্তবায়ন ঠিকমতো হচ্ছে না। এজন্য আমরা তিন বছরের অগ্রিম বরাদ্দের ধারণা উল্লেখ করার মতো শুরু করেছিলাম। থ্রি ইয়ার্স রোলিং নীতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সেই নীতি ও নথিগুলো শুধু অর্থমন্ত্রীর বাজেটের ব্যগই ভারী করছে। এ সময় বক্তারা বলেন, ভ্যাট হচ্ছে একটা লিকেজ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অনুৎসাহিত হচ্ছে। ভ্যাটের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সঞ্চয় এবং তা বিনিয়োগের বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া দরকার।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০