ইইউ’র কর্মশালায় বাণিজ্যমন্ত্রী: পোশাকের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত হলেও পোশাকের ন্যায্যমূল্য এখনও নিশ্চিত হয়নি। দেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলেই জিএসপি সুবিধার পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা অর্জনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিয়ে এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
‘দ্য মিড টার্ম ইভালুয়েশন অব দ্য ইউস জিএসপি’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘এভরিথিংস বাট আর্মস (ইবিএ) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রফতানিতে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দিয়ে আসছে। এ সুবিধা বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ফলে সার্বিক রফতানি বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশের কল-কারখানা বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানাগুলো ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের (ইইউ) চাহিদা মোতাবেক আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়নি।
মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধার মধ্যে চলে যাবে। এজন্য আমরা নানা ধরনের কাজ শুরু করেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখন কর্মবান্ধব পরিবেশে তৈরি হয়েছে দেশে। ২০১৩ সালে অপ্রত্যাশিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সরকার ও কারখানার মালিকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। দেশের সব ফ্যাক্টরিকে গ্রিন ফ্যাক্টরিতে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে।
কর্মশালায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন, ইউরোপিয়ান কমিশনের ডিরেক্টর জেনারেল ফর ট্রেড ডেনিয়েল ক্রামার, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জিএসপি ইভালুয়েশন টিমের প্রধান উইলিয়াম ভ্যান্ডার গিস্ট, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বেগম মাফরুহা সুলতানা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমদ, শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তারসহ অন্য স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাজারসুবিধা নীতির আলোকে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) ইউরোপীয় ইউনিয়নে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার (জিএসপি) সুবিধা পায়। অস্ত্র বাদে সব (ইবিএ) পণ্যে এ সুবিধা দেওয়া হয়।
তবে এলডিসির কাতার থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ আর এ সুবিধা পাবে না। সেক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ‘জিএসপি প্লাস’ হিসেবে পরিচিত যে বাজারসুবিধা আছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। সে সুবিধা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়ে আরও উন্নতি ঘটাতে হবে বলে কর্মশালায় বক্তারা উল্লেখ করেন।
সভায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৩ সালে নতুন যে জিএসপি পলিসি করবে সেটা নিয়েই আজকের কর্মশালা। আমরা যখন এলডিসি (স্বল্পন্নোত দেশ) তালিকা থেকে বের হয়ে জিএসপি প্লাসে যাবো, তখন অনেক শর্ত এটার মধ্যে চলে আসবে। বিশেষ করে আইএলওর যে ২৭টি কনভেনশন আছে, তা পূরণ করা হয়েছে কি না, তা দেখা হবে। যদিও আমরা ২৫টি পূরণ করেছি। এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশ, শ্রমিক অধিকার, কারখানা পরিবেশ, শ্রমিকদের মজুরি এগুলোও চলে আসবে। এক্ষেত্রে যদি আমরা ভালো পদক্ষেপ নিতে পারি, সক্ষমতা বাড়াতে পারি, তাহলে আমরা এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরেও জিএসপি প্লাস গ্রহণ করতে পারবো। যার মধ্যেও শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকবে।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা ‘অস্ত্র বাদে সবকিছু (ইবিএ) নীতিতে বাংলাদেশের অর্জন’ শীর্ষক উপস্থাপনায় বলেন, এ সুবিধা আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯৯ সালে দেশের রফতানি করা পণ্যের সংখ্যা ছিল ৬৯টি। ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪৪টিতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে তিন ধরনের বাজার সুবিধা রয়েছে। এলডিসিভুক্ত দেশগুলো পেয়ে থাকে ইবিএ (অস্ত্র বাদে সব কিছু) সুবিধা। দ্বিতীয়টি হলো জিএসপি প্লাস। এখানে ইতোমধ্যে পাকিস্তান, বলিভিয়াসহ আটটি দেশ প্রবেশ করেছে। এখানে যেতে হলে আমাদের ২৭টি শর্ত পূরণ করতে হবে। আর তৃতীয় ধাপ হলো স্ট্যান্ডার্ড জিএসপি। যেখানে কিছু পণ্য কম শুল্ক সুবিধা পাবে আর কিছু পণ্যে শুল্ক দিতে হবে।
সভায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রফতানির হিসাব করলে দেখা যায়, পোশাক রফতানি বেড়েছে। কিন্তু ফিশারিজ ও চামড়া পণ্যের রফতানির পরিমাণ বাড়লেও গ্রোথ কমেছে। এখন রফতানির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনার দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০