বাণিজ্য সম্মেলনের ওয়েবিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী

ইইউ ২০২৯ সাল পর্যন্ত জিএসপি অব্যাহত রাখবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাংলাদেশ রপ্তানি বাণিজ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) স্কিমের আওতায় বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের ওপর জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে। গ্র্যাজুয়েশনের পরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত ডিউটি ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে ইইউ। এতে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল ‘বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যকার অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের বাণিজ্যের অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ ছিল ইউরোপের সঙ্গে। তিনি জানান, এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে রুল অব অরিজিনের ক্ষেত্রে কঠিন নীতিমালার মুখোমুখি হতে হবে এবং তা মোকবিলায় ইইউর দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষর করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা নিয়ে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ইউরোপের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোয় বিশেষকরে ওষুধ, এপিআই এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান রিজওয়ান রাহমান। বাংলাদেশের কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজতকরণে ইউরোপের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত মাসে প্রকাশিত ইউরোপের বাজার বাংলাদেশের জিএসপি প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত নতুন নীতিমালায় ‘ইমপোর্ট-শেয়ার ক্রাইটেরিয়া’ বাদ দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সরাসরিভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে আমাদের এখনই সচেতনভাবে সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যার মাধ্যমে নতুন জিএসপি প্লাস পেতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে তিনি সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে আলোচনায় স্ট্যাডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির এজাজ বিজয়, গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রুবানা হক এবং ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উদ-দৌলা অংশ নেন।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, চার দশকে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে, তবে ইইউ কর্তৃক নতুন জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আমাদের কমপ্লায়েন্সের ওপর আরও বেশি হারে মনোযোগী হতে হবে এবং একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদিত পণ্যের বহুমুখীকরণের প্রস্তাব করেন এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতকে আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান।

ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন উদ-দৌলা বলেন, বাংলাদেশের কৃষি খাতে আধুনিকায়নে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপশি কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন তিনি, যার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বাড়বে ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। তিনি জানান, তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তার অভাবে তাতে রপ্তানি বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ব স্বীকৃত হালাল সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও টেস্টিং ল্যাবরেটরি না থাকায় মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ হালাল পণ্য রপ্তানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জাভেদ আকতার বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বছরে গড়ে প্রায় ২৩ মার্কিন ডলারের ফাস্ট মুভিং কনজিওমার প্রডাক্টস্ (এফএমসিজি) পণ্য গ্রহণ করে থাকে এবং বিশেষ করে এদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বাজারকে আরও সম্ভাবনাময় করেছে। বাংলাদেশ থেকে মুনাফা প্রাপ্তির লক্ষ্যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

নাসির এজাজ বিজয় বলেন, আর্থিক খাতের জন্য বাংলাদেশের বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এ খাতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে তা সফলভাবে মোকাবিলা করা গেলে মুনাফা অর্জন সম্ভব।

ইয়াসির আজমান বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, যা গ্রহণের মাধ্যমে বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০