আতাউর রহমান: চার মিউচুয়াল ফান্ডের ২৩৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সল্যুশনস (ইউএফএস)। এ ঘটনায় চার ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক ইউএফএসের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং পরিচালকদের সব সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আলোচিত ব্যক্তিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞায় চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) এমডির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি।
একই সঙ্গে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বাংলাদেশ পুলিশের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম অর্গানাইজড ক্রাইমকেও অবহিত করা হয়েছে। ফান্ডগুলো হচ্ছেÑইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস পদ্মা লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ব্যবস্থাপক ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সল্যুশনস লিমিটেড তার পরিচালিত ফান্ডগুলো থেকে ২০৭ কোটি ৪৮ লাখ ৭৪ হাজার ১১৭ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ অভিযোগে আলোচ্য সম্পদ ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে আইসিবি ফৌজদারি মামলা দায়ের করে। এ পর্যায়ে সম্পদ ব্যবস্থাপকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ ও বিদেশ গমনের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
এ বিষয়ে জানতে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শেয়ার বিজ থেকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর দেননি।
এর আগে আত্মসাতের মূল আসামি ইউএফএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ২৫ জনের হিসাব স্থগিত করা হয়েছিল। এসব হিসাবের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সল্যুশনস লিমিটেড। এছাড়া নাম রয়েছে ইশরাত আলমগীর ও সৈয়দা মেহরীন রহমান, সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের। ইউএফএসের এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর ও মাহিদ হক। চিঠিতে আরও নাম রয়েছেÑতারেক মাসুদ খান, মোহাম্মাদ জাকির হোসেন এবং মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানার। হিসাব স্থগিত রাখার তালিকায় আরও আছে ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড ৩৮, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড।
এছাড়া আরও রয়েছে ইউএফএসর প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক, ম্যানেজার সাকিব আল ফারুক, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান রাজিব। প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে নিটওয়্যার ক্রিয়েটর লিমিটেড, ভ্যানগার্ড ট্রেডার্স লিমিটেড, ম্যাক্স সিকিউর লিমিটেড, তানজিনা ফ্যাশন, আরআই এন্টারপ্রাইজ, নেত্রকোনা অ্যাকসেসরিজ ও মাল্টিম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
উল্লেখ্য, ইউএফএসের চার মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীদের ২৩৫ কোটি টাকা লোপাট এবং ১৭০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ইউএফএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীরের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন সনদ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া আইসিবি ট্রাস্টি এবং কাস্টডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে তাদের কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়। পাশাপাশি ফান্ডগুলোর বিধিবদ্ধ নিরীক্ষা ফার্ম আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং, রহমান মোস্তফা আলম অ্যান্ড কোং এবং সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে অডিট ও অ্যাসিউরেন্স কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধানগুলো হলোÑসিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১-এর সংশ্লিষ্ট বিধি মোতাবেক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়াল সল্যুশনস লিমিটেডের নিবন্ধন সনদ কেন বাতিল হবে না এ মর্মে নোটিশ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সঙ্গে জালিয়াতিপূর্বক অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, উক্ত কোম্পানির পরিচালক, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ মোতাবেক মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।