নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে চার মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরের দুবাইয়ে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় চার মিউচুয়াল ফান্ডে অনুসন্ধানের জন্য ফান্ডগুলোর নিরীক্ষক আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে তদন্তের শুনানিতে ডেকেছিল কমিশন। কিন্তু নিরীক্ষক শুনানিতে উপস্থিত হয়নি। তাই নিরীক্ষককে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কমিশন। বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে গতকাল বুধবার এ বিষয়ে চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি।
বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে উল্লিখিত নিরীক্ষককে যে কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষা থেকে নিষিদ্ধ করা উচিতÑজানিয়ে বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইউএফএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় চারটি ফান্ড ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ইউনিট ফান্ড ও ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ডের নিরীক্ষা করে আসছে আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। নিরীক্ষক মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অনুসন্ধানের জন্য তদন্তের শুনানিতে উপস্থিত হয়নি। এ থেকে স্পষ্ট যে তদন্ত কমিটির সঙ্গে নিরীক্ষক অপেশাদার আচরণ করেছে। তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ধারা ২০-এ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজার, ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান, ইস্যুকারী এবং সম্পদ ব্যবস্থাপককে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে, নিরীক্ষক আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে ইউএফএসের অধীনে থাকা কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের নিরীক্ষার অনুমতি দেয়া হবে না। কমিশন আরও নির্দেশ দিয়েছে, নিরীক্ষককে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষক হতে অনুমতি দেবে না কমিশন। সেই সঙ্গে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে কোম্পানিটির ফান্ড সংশ্লিষ্টদের কাছে ২৩টি তথ্য চেয়েছে কমিশন, যা ৮ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। বিএসইসির চিঠিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলোÑইউএফএসের ব্যবস্থাপনার ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ডের পূর্বের ও বর্তমানের সব আর্থিক প্রতিবেদন, ফান্ড দুটির সব ব্যাংক স্টেটমেন্টের তথ্য, ফান্ড দুটিতে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও তাদের ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট, ফান্ডগুলোর গ্রাহক ও তাদের টাকার পরিমাণের তথ্য, ফান্ড দুটিতে বিনিয়োগ কমিটির সদস্যদের তালিকা।
সেই সঙ্গে ফান্ড দুটির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেগুলো ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ জমা দিতে বলা হয়েছে। ফান্ডগুলোর পোর্টফোলিওতে থাকা কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ফান্ড দুটির বিনিয়োগের অবস্থা এবং নির্দিষ্ট সীমার বিষয়ে প্রকাশ করা তথ্য, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ফান্ড দুটির বিনিয়োগের বিষয়ে ট্রাস্টি থেকে প্রাপ্ত কনসেন্ট লেটার, ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্য ও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ফি এবং সংশ্লিষ্ট সব তথ্য কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ইউএফএস ও তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ ১৫ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত বা জব্দ করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা হচ্ছে বিএফআইইউ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠানো চিঠিতে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনসহ ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ও টিআইএন নম্বর (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হয়েছে। এগুলো হলোÑইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেড। ইউএফএসের এমডি সৈয়দ হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর ও মাহিদ হকের নাম রয়েছে। চিঠিতে আরও নাম রয়েছেÑতারেক মাসুদ খান, মোহাম্মাদ জাকির হোসেন ও মোসা. উম্মে ইসলাম সোহানার। এছাড়া নাম রয়েছেইশরাত আলমগীর ও সৈয়দা মেহরীন রহমান, সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইনের।
অ্যাকাউন্ট স্থগিত রাখার তালিকায় আরও রয়েছে ইউএফএস-আইবিবিএল শরিয়াহ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস-পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড ৩৮, ইউএফএস-ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস-পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড। এর আগে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসি ও আইসিবিকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছিল।