শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনকে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ২৭০ কোটি ইউরো মূল্যের (প্রায় ৩০০ কোটি ডলার) নতুন অস্ত্রসহায়তার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। গত শনিবার জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। একে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনকে বার্লিনের দেয়া সবচেয়ে বড় আকারের সহায়তা বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জার্মান সাময়িকী দের স্পিগেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটি জার্মানির দেয়া সবচেয়ে বড় আকারের অস্ত্রসহায়তা।
জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সহায়তার মধ্যে ৩০টি অতিরিক্ত লেপার্ড-১ ট্যাংক, মার্ডার সাঁজোয়া যান, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও নজরদারি ড্রোন রয়েছে।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের সবার প্রত্যাশা, ইউক্রেনের জনগণের বিরুদ্ধে রাশিয়া যে ভয়াবহ যুদ্ধ চালাচ্ছে, তার দ্রুত অবসান হোক। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে যত দিন দরকার জার্মানি সাধ্যমতো ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাবে।
এ সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রধান সামরিক কর্মকর্তা অ্যানড্রি ইয়েরমাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে বলেন, আমাদের মিত্র দেশগুলোকে ধন্যবাদ।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো ইউক্রেনের জন্য ক্রমাগত শক্তিশালী অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান চাইলেও তা এখন পর্যন্ত কেউ সরবরাহ করেনি।
এর আগে ২০২২ সালে জার্মানি ইউক্রেনকে ২০০ ইউরো মূল্যের সামরিক সহায়তা দিয়েছিল। ইউক্রেনকে আরও অত্যাধুনিক ট্যাংক লেপার্ড-২ পাঠানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি। এগুলোর ব্যবহার নিয়ে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়াও শুরু করেছে তারা।
তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অস্ত্র রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার জন্য ব্যবহার না করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন বলে এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। সাপ্তাহিক বিল্ড অ্যাম সোনট্যাগে এক সাক্ষাৎকারে জার্মানির চ্যান্সেলর বলেন, এ বিষয়ে একটি ঐকমত্য হয়েছে। ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা দেশটিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুত আঘাত হানতে সক্ষম রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, সেই সঙ্গে ট্যাঙ্ক দিয়ে সজ্জিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব অস্ত্র পূর্বাঞ্চল থেকে রাশিয়ান সেনাদের হটানোর চেষ্টায় সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করেন ওলাফ শলৎজ। এর মধ্যেই ইউক্রেনকে ৮৮টি লেপার্ড-১ ট্যাঙ্ক দেয়ার অনুমোদন দেয় জার্মান সরকার। একটি বেসরকারি অস্ত্র নির্মাতার কাছ থেকে পুরোনো এ ট্যাঙ্কগুলো কিয়েভকে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
এর আগে জানুয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধের ঘটনায় রুশ নেতাদের বিচারের জন্য একটি বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানায় জার্মানি। দ্য হেগ একাডেমি অব ইন্টারন্যাশনাল ল-তে দেয়া এক ভাষণে এ আহ্বান জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। তিনি বলেন, এ আদালতের কার্যক্রম বিদেশ থেকে হওয়া উচিত। তবে তাদের রুশ নেতাদের বিষয়ে তদন্ত ও বিচারের সক্ষমতা থাকতে হবে। অংশীদারদের নিয়ে এমন একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জানান বেয়ারবক।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি রুশ কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন রাশিয়ার নেতাদের উদ্দেশ্যে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, কথিত ওই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার নির্দেশ দেয়ার ওই ট্রাইব্যুনালে রুশ নেতাদের বিচার করা হবে। প্রস্তাবটির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তার জবাব দেন রুশ প্রেসিডেন্টের আবাসিক কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, তারা কোনো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের যে কথা বলছে তার কোনো আইনি অধিকার তাদের নেই। আমরা সেরকম কোনো কিছু মেনে নেব না বরং তা প্রত্যাখ্যান করব। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব দিলেও জাতিসংঘে নিযুক্ত ইইউ’র রাষ্ট্রদূত ওলোফ স্কুগ বলেছেন, এ ধরনের একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গঠন করা আইনগতভাবে অত্যন্ত জটিল।
এদিকে ইউক্রেনের জন্য একটি নতুন ১২০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহযোগিতা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও কামানের গোলা সরবরাহ করা হবে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ সহযোগিতা প্যাকেজ ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চলমান উদ্যোগ। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধ ও নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় সহযোগিতা করবে এ প্যাকেজ। সর্বশেষ এ সহযোগিতা প্যাকেজের মাধ্যমে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর ইউক্রেনকে দেয়া মার্কিন সহযোগিতার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।