শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেন পুনর্গঠনে তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। আগামী তিন বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনসহ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য এ সহায়তা দেয়া হবে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এ ঘোষণা দিয়েছেন। খবর: এনডিটিভি।
গতকাল বুধবার লন্ডনে শুরু হয়েছে ইউক্রেনের পুনর্গঠনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন-২০২৩। এর উদ্দেশ্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি জোরদার করা। এতে ৬১ দেশের এক হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এই সম্মেলনের আগের দিন যুক্তরাজ্য ওই সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিল।
ইউক্রেনে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পৃথক ফ্রেমওয়ার্ক চালু করবেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পৃথক ফ্রেমওয়ার্ক চালু করা হবে, যাতে ইউক্রেনের ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে তারা পিছপা না হন।
এই অর্থের মধ্যে ২০ মিলিয়ন বা দুই কোটি ডলার দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে পুনর্গঠন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলার পৃথকভাবে উন্নয়ন তহবিলে দেয়া হবে।
গত মার্চে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। দেশটির প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অ্যানাবেল গোল্ডি নিশ্চিত করেন যে চ্যালেঞ্জার টু যুদ্ধট্যাংকের পাশাপাশি ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামও রয়েছে।
এরপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাজ্য যদি ইউক্রেনকে ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধ গোলাবারুদ ও ট্যাংক সরবরাহ করে, তাহলে মস্কো এর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনে শুধু ট্যাংক সরবরাহের ঘোষণাই দেয়নি, ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামের শেল দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। যদি এটি ঘটে, তবে রাশিয়া প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হবে। বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এসব যদি ঘটে তাহলে রাশিয়াকে সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। কারণ পশ্চিমারা এরই মধ্যে সম্মিলিতভাবে পারমাণবিক উপাদানসহ অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে।
তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পুতিনের এই সতর্কতা নাকচ করে বলেছে, বর্মছিদ্রকারী শেলগুলো কয়েক দশক ধরে আদর্শ সরঞ্জাম হিসেবে ছিল। পারমাণবিক অস্ত্র বা সক্ষমতার ব্যাপারে কিছুই করার নেই। মন্ত্রণালয় গোলাবারুদকে পারমাণবিক উপাদানসহ অস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করে ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, রাশিয়া এটা জেনেও ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করার চেষ্টা করছে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সহায়তা দিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান চালকদের উন্নত ন্যাটো যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। একে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বৃদ্ধির বড় ধরনের প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি কিয়েভকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ত্বরান্বিত করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীকে যুক্তরাজ্যের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রশিক্ষণের ফলে দেশটির বিমানচালকরা ন্যাটোর যুদ্ধজাহাজ চালাতে পারবেন।
এর আগে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য প্রথম দেশ হিসেবে কিয়েভে ট্যাংক সরবরাহ করার
প্রতিশ্রুতি দেয়। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ১৪টি ট্যাংক দেয়ার কথা বলা হলেও তাদের দেখাদেখি যুক্তরাষ্ট্র ও কিয়েভের অন্য মিত্ররা বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ট্যাংক সরবরাহে সম্মত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি পৃথক দেশ হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে একসঙ্গে ঘোষণা দিলে ভালো হয়।
যুক্তরাজ্যের প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ৩৮টি দেশের চারশর বেশি প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনে একসঙ্গে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা করবে।
এরই মধ্যে অনেক বহুজাতিক ও বৃহৎ করপোরেশন, যেমন ভার্জিন, সানোফি, ফিলিপস, হুন্দাই ও সিটি ইউক্রেনে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে চুক্তি করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও দক্ষ কর্মীদের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।
সুনাক বলেন, ইউক্রেনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশ্বাস বাড়াতে পৃথক কাঠামো গঠন করা হবে।