ইউক্রেনে দফায় দফায় রাশিয়ার হামলা, নিহত ৭, মার্শাল ল জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরে মিসাইল হামলাসহ বিভিন্ন এলাকায় দফাল দফায় হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতেও একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে । ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ।
এদিকে রাশিয়ার ৫টি যুদ্ধবিমান ও ১টি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেন বলছে, তিন দিকের সীমান্ত দিয়ে তাদের দেশে হামলা চালানো হয়েছে। রাশিয়া, বেলারুশ এবং ক্রিমিয়া সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ান সেনারা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সীমান্ত পরিষেবার পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলীয় লুহানস্ক, সামি, খারকিভ, ছেরনিহিভ এবং ঝিতোমির অঞ্চলে হামলা চলছে। কামান, ভারী সরঞ্জাম এবং ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে সীমান্ত ইউনিট, সীমান্ত টহল এবং চেকপয়েন্টগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, লুহানস্ক অঞ্চলে হামলার সময় রাশিয়ার পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন। পুতিনের এ ঘোষণা দেওয়ার ভাষণটি যখন টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছিল একই সময়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক চলছিল; যেখানে তাকে থামানোর আহ্বান জানানো হয়।
পরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মিসাইল হামলার অভিযোগ তোলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। জেলেনস্কির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইউক্রেনের অনেক অবকাঠামো এবং সীমান্তরক্ষীদের ওপর মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এমনকি দেশটির রাজধানী কিয়েভেও দফায় দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এছাড়া সীমান্ত অতিক্রম করে খারকিভ অঞ্চলেও ঢুকে পড়েছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটির দূরত্ব রুশ সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের পূর্বে ‘তীব্র বোমা হামলা’ শুরু করেছে।
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে যে কিয়েভের কাছে বরিস্পিল বিমানবন্দরসহ একাধিক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রুশ বিমান হামলা প্রতিহত করতে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী লড়াই করছে বলেও বলা হয় ওই বিবৃতিতে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে রুশ বার্তাসংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, কোনো ইউক্রেনীয় শহরে হামলা চালানো হচ্ছে না। নির্ভুলভাবে আক্রমণ করতে সক্ষম অত্যাধুনিক সব অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের সামরিক অবকাঠামো, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিমান বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা করা হচ্ছে।
এদিকে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনে সাত জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের পুলিশ।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অডেসা এলাকার বাইরে পডিলস্কে একটি সামরিক ইউনিটের ওপর হামলায় ছয় জন নিহত হয়েছে। এছাড়া এই হামলায় আহত হয়েছে আরও সাত জন। হামলার পর এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ আছে ১৯ জন।
কর্মকর্তারা আরও জানান, মারিউপল শহরে বিমান হামলায় নিহত হয়েছে আরও এক জন।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দেশের সামরিক অবকাঠামো এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। এমন অবস্থায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দেশজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয়ের শপথও করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদমে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর ওই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে, বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে আর্টিলারি আক্রমণের কবলে পড়েছে ইউক্রেন। হামলার জবাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও গোলা ছুড়ছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুশ-সমর্থিত পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের হাতে ইউক্রেনের সরকার নিয়ন্ত্রিত শচস্ত্য শহরের পতন হয়েছে। তীব্র উত্তেজনার মাঝে জেলেনস্কি ইউক্রেনজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।
জো বাইডেন এবং জেলেনস্কির টেলিফোনে আলোচনার পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আজ রাতে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং আমরা সবেমাত্র কথা বলা শেষ করেছি। আমি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিনা উসকানিতে এবং অন্যায্য হামলার নিন্দা জানাই।
এদিকে রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত ইউক্রেনের সামরিক সদর দপ্তরে রাশিয়ার হামলার পর শহরটি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন বহু মানুষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রতিবেশী এই দেশটিতে হামলার ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানতে শুরু করে।
কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরের পাশাপাশি হামলা হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতেও। হামলার মুখে রাজধানী কিয়েভে জরুরি সাইরেন বাজায় কর্তৃপক্ষ। পরে আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন বহু মানুষ। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ছবিতে মহাসড়কে পলায়নরত মানুষের গাড়ির স্রোত ও জট দেখা যায়।
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার এই আক্রমণের মুখে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক ফুঁটে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অনেকেই সেখানে জানিয়েছেন, নিরাপত্তার খোঁজে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে, এমনকি বাড়ির বেজমেন্টেও অবস্থান নিয়েছেন।
টেলিভিশন ফুটেজেও মানুষকে দলবেঁধে রাস্তায় প্রার্থনা করতে দেখা যায়। এছাড়া কিয়েভ থেকে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, রাজধানীর রাস্তায় খুব কম মানুষের দেখা মিলছে এবং বহু মানুষ টাকা তোলার মেশিনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটের দিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলা শুরু করে রাশিয়া। দুপুরে মস্কো দাবি করেছে, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলেছে রুশ সামরিক বাহিনী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০