শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে আগামী দশ বছরে ৪১১ বিলিয়ন (৪১ হাজার ১০০ কোটি) লাগবে। এর মধ্যে ৫০০ কোটি ডলার ইউক্রেনের গ্রাম ও শহরগুলো থেকে শুধু ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ৩৪ হাজার ৯০০ কোটি (৩৪৯ বিলিয়ন) ডলার লাগবে। খবর: আল জাজিরা।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এ হিসেবে যুদ্ধের এক বছর পেরিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেন পুনর্গঠনে বিশ্বব্যাংককে ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদন গত বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুমানের ভিত্তিতে অর্থের এ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। যত দিন যুদ্ধ চলবে, অর্থের চাহিদা বাড়তে থাকবে। তাই এ পরিমাণকে ন্যূনতম বিবেচনা করা উচিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউক্রেন সরকার, ইউরোপীয় কমিশন ও জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে রুশ হামলায় ইউক্রেনে প্রায় ৪০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য খাতের পাঁচটি ভবনের মধ্যে একটি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ৬৫০টি অ্যাম্বুলেন্স চুরি হয়েছে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলমান যুদ্ধে ৪৬১ শিশুসহ সাড়ে ৯ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট আনা বিজেরদে বলেন, ইউক্রেনের পুনর্গঠনে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে ড্রোন ও বিমান হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। বিশেষ করে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় একের পর এক হামলা চালাচ্ছে রুশবাহিনী। ইউক্রেনের সেনারা প্রতিরোধ গড়ে না তুলতে পারলে পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার নিত। হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগস্ত অঞ্চল বা শহরের মধ্যে রয়েছে দোনেস্ক, খারখিভ, লুহানস্ক ও খেরসন। রুশ হামলা থেকে বাদ যায়নি বিদ্যালয়-হাসপাতালের মতো বেসরকারি স্থাপনাও। ধারাবাহিক হামলার পরও সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন সরকার। খোলা রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যুদ্ধের মধ্যেও শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ও ভাতা দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেয়া হচ্ছে পেনশনও। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলোও উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে আনা বিজেরদে সাংবাদিকদের বলেন, কঠিন সময়েও বেতন-ভাতা, পেনশন দেয়ার মতো নিয়মিত কাজগুলো চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ইউক্রেন সরকার। এ কাজে দেশটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা করা দরকার। এসব কাজ অব্যাহত রাখতে ইউক্রেনের প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার প্রয়োজন।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো মেরামতে ২০২৩ সালে ১৪ বিলিয়ন (১ হাজার ৪০০ কোটি) ডলার প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে একটি চুক্তি করেছেন। এ চুক্তির আওতায় চার বছর ধরে ইউক্রেনের পুনর্গঠন তহবিলে ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৫৬০ কোটি) ডলার ঋণ
দেবে সংস্থাটি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জানিয়েছিলেন, যুদ্ধের কারণে তার দেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা পোষাতে মাসে ৭০০ কোটি ডলার দরকার। যুদ্ধ এখনও চলছে, তাই খরচও বাড়ছে।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল জানান, যুদ্ধের সরাসরি ক্ষতির বিবেচনায় ইউক্রেনের জিডিপি চলতি বছর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাবে এবং পরোক্ষ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এ পর্যন্ত ৫৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে যা ইউক্রেনের অর্থনীতির আকারের তিনগুণ।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন বলেন, ইউক্রেনের পুনর্গঠনের খরচের একটি অংশ রাশিয়ার বহন করা উচিত। দেশটির পুনর্গঠনে বিপুল অর্থ প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি।