ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) প্রতিরোধে শতভাগ হাইজেনিক টয়লেট নিশ্চিত করতে ইউটিআই ও হাইজেনিক টয়লেট ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ব টয়লেট দিবস উদ্যাপন করেছে হারপিক ও আরটিভি। ‘সকলের জন্য স্যানিটেশন’ সেøাগানে রাজধানীর বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া স্টুডিওতে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় উপকমিশনার (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) এবং বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপার্চায অধ্যক্ষ কামরুল হাসান খান, সাবেক সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম মুক্তা, মেহজাবিন খালেদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ডেইজি সারোয়ার, ডেটল-হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের মুখ্য সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আহমেদ তারেক উপস্থিত ছিলেন। অভিনেত্রী আইরিন সুলতানা, উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, ফারিয়া শাহরিন, তানিন তানহা, কণ্ঠশিল্পী ঝিলিক, বিন্দু কণা, নাজু আখন্দ, আর্নিক, বেলী আফরোজ, সাবরিনা সাবা, নৃত্যশিল্পী বারিষ হকসহ দেশের শোবিজ অঙ্গনের অনেকে উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা করে টয়লেটের ব্যবস্থা করেছি। আমরা মনে করি, মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি স্বাস্থ্যসেবা। সেই স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম পাঠ হচ্ছে টয়লেট। আমাদের দেশে যে পাবলিক টয়লেট-ব্যবস্থা রয়েছে, তা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই আমরা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট তৈরি করব। সেগুলো ব্যবহারের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। এজন্য সম্মিলিতভাবে এগিয়ে না এলে কারও একার পক্ষে কাজ করে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামের সঙ্গে টয়লেটের বিষয়টিও জড়িত। কারণ, মানুষ যখন জ্যামে আটকে থাকে, তখন টয়লেটের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য খুবই দরকার। ঢাকা শহরে যারা বড় মার্কেট বা শপিংমল তৈরি করবেন, তাদের বাধ্যতামূলক ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট তৈরি করতে হবে।
রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং ডিরেক্টর নুসরাত জাহান বলেন, হারপিক একটি দায়িত্বশীল ব্র্যান্ড হিসেবে সবার জন্য সব জায়গায় নারীবান্ধব টয়লেট নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা স্বপ্ন দেখি, সবার জন্য পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত টয়লেট এবং একটি স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশের।
আরটিভির সিইও আশিক রহমান বলেন, নারীদের অন্যতম সমস্যাগুলোর একটি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা মূত্রনালির সংক্রমণ। প্রয়োজনীয় পানি পান না করা বা দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে যেতে না পারার কারণে তাদের কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন এ রোগে। এ মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন বাসার বাইরে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত টয়লেট।
বাংলাদেশের অনেক নারী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, বাজার, শপিংমলে গেলে টয়লেটে যাতে না যেতে হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় পানি পান করা থেকে বিরত থাকেন। এ অভ্যাসের ফলে দেখা দিতে পারে ইউটিআই, কিডনির সমস্যাসহ
নানাবিধ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। সারা দিন টয়লেট চেপে রাখায় তাদের ইউটিআইয়ে ভোগার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গড়ে ১০ নারীর মধ্যে পাঁচজন ইউটিআই রোগে ভোগেন। হারপিক বাংলাদেশের ফেসবুক পেজের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৭৯ শতাংশ মানুষ পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করে না। ৯৪ শতাংশ বাসার বাইরে ব্যবহার-উপযোগী টয়লেট পায় না। ৯১ শতাংশ মানুষ শহরের শপিংমলগুলোয় নারীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী টয়লেট পায় না এবং ৭৯ শতাংশ ইউটিআই সম্পর্কে জানেই না।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী ইউটিআইয়ে আক্রান্ত। সম্প্রতি ইউনিসেফ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ৫৬ মিলিয়ন মানুষ অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন রোগে ভোগে। এতে আরও বলা হয়েছে, পয়োব্যবস্থাপনা একটি শক্তিশালী অর্থনীতি, স্বাস্থ্যের উন্নতি, নিরাপত্তা ও মর্যাদা, বিশেষ করে নারীদের রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য কর্মস্থলে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ টয়লেট ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। ইউটিআই মোকাবিলায় পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত টয়লেটের ভূমিকা অনন্য।
ইউটিআই’র ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সম্প্রতি হারপিক #ঐধৎঢ়রপঅমধরহংঃটঞও শিরোনামে একটি ডিজিটাল ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যার লক্ষ্য দেশে শতভাগ নারীবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নিশ্চিত করা। হারপিক ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত টয়লেট ব্যবহারের সচেতনতায় কাজ করে আসছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে হারপিক বর্তমানে ইউটিআই ও হাইজেনিক টয়লেট ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে।