ইউনাইটেডে অগ্নিকাণ্ড

চার পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগুন লেগে কভিড-১৯ ইউনিটে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে দিতে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমঝোতায় আসতে না পারায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক, হাসান এম এস আজিম, মুনতাসির আহমেদ। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান খান ও তানজীব উল আলম।

মোস্তাফিজুর বলেন, “৩০ লক্ষ টাকা করে দিতে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে। আদালত আজকে জানতে চেয়েছিল সমঝোতার অগ্রগতি কতদূর, আমরা বলেছি একটা পরিবার মো. মনির হোসেনের পরিবার ২০ লক্ষ টাকা সেটেল করেছে। বাকি পরিবারগুলা কোটি কোটি টাকা চাচ্ছে। তখন আদালত বললেন শেষ পর্যন্ত কত টাকা পাবেন, সেটা পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির পর জানা যাবে। কিন্তু আপনারা ৩০ লক্ষ টাকা করে বাকি চার পরিবারকে দেন ১৫ দিনের মধ্যে।”

গত ২৯ জুন আদালত এক আদেশে ইউনাইটেড হাসপাতালকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাথে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতা করতে বলে ১৩ জুলাই আদেশের জন্য রেখেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার এ আদেশ হলো।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী নিয়াজ মাহবুব বলেন, “গত ২৯ জুন আদালত সমঝোতা করতে বলেছিল। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে চিঠি দেয়। সেমতো ইউনাইটেড হাসপাতালের সাথে আলোচনায় বসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।“আলোচনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে অর্থ দিতে চেয়েছিল, তাতে চার পরিবার রাজি হয়নি। শুধু মনির হোসেনের পরিবার ২০ লাখ টাকায় সমঝোতা করে। আজ শুনানি শেষে আদালত ৪ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ১৫ দিনের মধ্যে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।”

এ সংক্রান্ত তিনটি রিট আবেদন একসঙ্গে শুনে গত ২৯ জুন এক আদেশে আদালত ইউনাইটেড হাসপাতালকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে সমঝোতা করতে বলে ১৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রেখেছিল।

সেই সঙ্গে ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে করা মামলাটির তদন্তও দ্রুত শেষ করতে বলে আদালত।গত ২৭ মে রাতে গুলশানের বেসরকারি ওই হাসপাতালটির নিচের প্রাঙ্গণে করোনাভাইরাসের রোগীদের জন্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে আগুন লাগলে একটি কক্ষে পাঁচ রোগীর মৃত্যু ঘটে। তাদের মধ্যে তিনজনের কভিড-১৯ পজিটিভ ছিল। নিহতরা হলেন মো. মাহবুব (৫০), মো. মনির হোসেন (৭৫), ভারনন অ্যান্থনি পল (৭৪), খোদেজা বেগম (৭০) ও রিয়াজ উল আলম (৪৫)।

ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন এবং নিহতদের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ মে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব ও শাহিদা সুলতানা শিলা।

আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মো. মাহবুব এলাহী চৌধুরীর ছেলে আননান চৌধুরী এবং ভারনন অ্যান্থনি পলের ছেলে আন্দ্রে ডোমিনিক পলও পরে সেই রিটের বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এরপর গত ২১ জুন রিয়াজুল আলমের স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার ১৫ কোটি ক্ষতিপূরণ চেয়ে আলাদা একটি রিট আবেদন করেন। তাতে এক কোটি টাকা অন্তবর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

এছাড়া এ ঘটনার বিচারিক তদন্ত চেয়ে ১ জুন আরেকটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ ও হামিদুল মিসবাহ। কেন বিচারিক তদন্ত করা হবে না- সে বিষয়ে রুলও চাওয়া হয় ওই আবেদনে।

গত ২ জুন প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৪ জুনের মধ্যে ঘটনার প্রতিবেদন দিতে বলে হাই কোর্ট। সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করা হলে সোমবার তা উপস্থাপন করা হয়।

পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা রয়েছে। রাজউক বলছে, করোনাভাইরাসের জন্য আলাদা করে আইসেলেশন ইউনিট করার অনুমতি নেয়নি ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হত। তাছাড়া হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিবেদনে ওই ঘটনাকে স্রেফ ‘দুর্ঘটনা’ বলেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০