শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, আবাসন ও নির্মাণ, বন্দর ব্যবস্থাপনা, বস্ত্রসহ আরও কয়েকটি উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপের। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গ্রুপটি। এ অবস্থানে আসার পেছনে গ্রুপটির অনন্য ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে পথপ্রদর্শক হবে এমনই স্বপ্ন ছিল তাদের। এ স্বপ্নের শুরু ১৯৭৮ সালে।
১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে কিছু ছোট উদ্যোগ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিন বন্ধু। পরে আরও দুই বন্ধু ও এক বন্ধুর ছোট ভাই তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। কয়েক বছরের মধ্যে পণ্য বিনিময় বাণিজ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারেও আত্মপ্রকাশ করে। ছয় বন্ধুর পরিশ্রমের ফলে দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রুপে পরিণত হয় ইউনাইটেড।
ইউনাইটেড গ্রুপে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন হাসান মাহমুদ রাজা। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন মঈন উদ্দিন হাসান রশিদ। পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন আহমেদ ইসমাইল হোসেন, ফরিদুর রহমান খান, আকতার মাহমুদ রানা, খোন্দকার মইনুল আহসান শামীম, নাসিরুদ্দিন আকতার রশীদ, মালিক তালহা ইসমাইল বারি, ফাহাদ খান ও ওয়াসেকুল আজাদ।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে ইউনাইটেড গ্রুপের অসামান্য অবদান রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্রুপটির বর্তমান পোর্টফোলিও ১০০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে চলমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে তারা। দেশের আবাসন খাতেও গ্রুপটির ভূমিকা রয়েছে। এ খাতের উন্নয়নে তারা সব সময় সচেষ্ট থাকে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত তারা। এ গ্রুপের অধীনে রয়েছে ইউনাইটেড প্রপার্টি সল্যুশন লিমিটেড ও নেপচুন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।
স্বাস্থ্য খাতে শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ। রোগীদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে গ্রুপটি। রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হাসপাতালটিতে ১১টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। সর্বশেষ চিকিৎসা প্রযুক্তির ব্যবহার, ডাক্তার, নার্স ও কর্মীদের অভিজ্ঞতা আর আন্তরিকতার কারণে দেশে অনন্য অবস্থানে আছে হাসপাতালটি। ইউনাইটেড গ্রুপ ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশ্বের কয়েকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারে। গ্রুপটির অধীনে আরও রয়েছে ইউনাইটেড মেরিটাইম একাডেমি ও ইউনাইটেড নার্সিং কলেজ।
পিইটি বোতল তৈরিতে গ্রুপটির সুনাম রয়েছে। ওষুধশিল্পের জন্য এ ধরনের বোতল তৈরি করছে গ্রুপের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পলিমারস লিমিটেড। সুতা উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছে কুমিল্লা স্পিনিং মিলস লিমিটেড। কুমিল্লার বুড়িচংয়ে রয়েছে এর কারখানা। প্রতিদিন প্রায় ১৪ টন সুতা উৎপাদন হয় এখান থেকে। জাপানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে ২০১২ সালে গুঞ্জে ইউনাইটেড লিমিটেড চালু করে। ২০১৫ সালে দেশের পেট্রোনাস ব্র্যান্ডেড তেল ও পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আধুনিক লুব্রিকেটিং তেলমিশ্রিত ইউনাইটেড লুব অয়েল লিমিটেড (ইউএলওএল) প্রতিষ্ঠা করে। সমুদ্র ব্যবস্থাপনার জন্য এ গ্রুপের অধীনে রয়েছে ইউনাইটেড ল্যান্ডপোর্ট টেকনাফ লিমিটেড।
হজযাত্রীদের সহায়তার লক্ষ্যে ইউনাইটেড গড়ে তোলে মক্কা মদিনা ট্রাভেল অ্যাসিস্টেন্স কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপের।
কর্মীবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে ইউনাইটেড গ্রুপের বেশ সুনাম রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয় তারা। যথাসময়ে কর্মীদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতেও তৎপর। কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা অতুলনীয়। কর্মীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, বিমা, অনুদান, সুদবিহীন ঋণ, পারিবারিক চিকিৎসা বিমা চালু করেছে তারা। কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের জন্য বৃত্তি দেওয়া হয়। গ্রুপটিতে একটি জাকাত ফান্ডও রয়েছে।
করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপ। এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গঠন করা হয়েছে ইউনাইটেড ট্রাস্ট। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নত করা এর প্রাথমিক লক্ষ্য। ইতোমধ্যে একটি ডিগ্রি কলেজ, চারটি উচ্চবিদ্যালয়, ছয়টি আলিয়া মাদরাসা (কামিল ও ফাজিল), তিনটি হেফ্জখানা, পাঁচটি অনাথ আশ্রম ও ১১টি প্রাথমিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়া হাসপাতাল ও কয়েকটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে গ্রুপটি। গ্রামীণ নারী ও ক্ষুদ্র দোকানিদের জন্য ‘সুদবিহীন ক্ষুদ্রঋণ’, ‘হস্তশিল্প প্রকল্প’, কৃষকদের জন্য ‘সুদবিহীন কৃষিঋণ’, বেকারদের জন্য ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং’সহ বয়স্ক ভাতা, নিরাপদ খাবার পানি চালু করেছে। বৃদ্ধাশ্রম ও গুচ্ছগ্রাম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়া পাওয়ার অ্যাওয়ার্ডস ২০১৫তে তিনটি বিভাগে পুরস্কৃত হয় ইউনাইটেড গ্রুপ।
‘আমাদের সামাজিক কল্যাণ সংস্থা ইউনাইটেড
ট্রাস্ট পল্লী শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং স্যানিটেশন, দারিদ্র্য বিমোচন ও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। মিশন এবং ভিশন সক্রিয়ভাবে অর্জন করতে ট্রাস্টের বাজেট এ বছর প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তারা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য জাকাতভিত্তিক পরিকল্পনা (স্কিম) স্থাপন করছে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকাগুলোতে তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করছে; যেমন লিঙ্গবৈষম্যের শিকার নারীদের পুনর্বাসন, পথশিশু এবং ভিক্ষুকদের নির্মূল করা। ইউনাইটেড ট্রাস্টের প্রচেষ্টা আরও গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে তাদের যতটা পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন, আমরা তা করার পরিকল্পনা করেছি।’
হাসান মাহমুদ রাজা চেয়ারম্যান