Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:27 am

ইউনিলিভার-জিএসকের বিষয়ে অধিকতর তদন্তে বিএসইসি

সাইফুল্লাহ আমান: বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে বাংলাদেশকে অধিগ্রহণের ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত বছর ১১ নভেম্বর বিএসইসির একটি চিঠির প্রত্যুত্তরে জিএসকে বাংলাদেশের দেয়া চিঠির ওপর ভিত্তি করে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নেয়। এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি সাম্প্রতিক সময়ে জিএসকে বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মিনহাজকে পাঠানো হয়।

গত ১০ মার্চ বিএসইসির পক্ষ থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে ইউনিলিভার কর্তৃক জিএসকে বাংলাদেশের ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়ার বিষয়ে আরও অধিকতর তদন্ত করা হবে বলে জানানো হয় চিঠিতে। চিঠি পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিএসইসির পক্ষ থেকে চাওয়া কিছু কাগজপত্রসহ চাওয়া হয়।

এর আগে বিএসইসি ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সিকিউরিটিজ রেগুলেটর অধিগ্রহণ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ১১-এর ২ ধারা অনুযায়ী চুক্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে।

এ বিষয়ে বিএসইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, কমিশন সম্প্রতি পর্যবেক্ষণ করেছে যে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার লিমিটেড, যা আগে জিএসকে বাংলাদেশ নামে ছিল, তারা ওষুধ বাজারজাতকরণ বন্ধ করে দেয়া এবং তাদের বহুল প্রচলিত সেনসোডাইন টুথপেস্ট ও ইনোসহ প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় এমন পণ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করেছিল।

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, কোম্পানিটির প্রায় ৮২ শতাংশ বিক্রি করে দেয়ার পরও জিএসকে বাংলাদেশের শেয়ারগুলো ইউনিলিভার গ্রুপ শেয়ারপ্রতি দুই হাজার ৪৬ টাকায় কীভাবে কিনেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএসইসি।

এর আগে গত বছর ২৮ জুন দুই হাজার ২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরিবহন প্রতিষ্ঠান সেটফার্স্ট লিমিটেডের কাছ থেকে জিএসকে বাংলাদেশের ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করে ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভি।

এরপর গত বছরের ২ জুলাই জিএসকে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার লিমিটেড করা হয়।

নাম পরিবর্তনের চিঠির অনুলিপি অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।

ইউনিলিভারকে দেয়া বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি নতুন করে আর কোনো বিনিয়োগ করেনি, তবুও এ কোম্পানির সম্পত্তি, প্লান্ট ও সরঞ্জামাদি (পিপিই) তিন কোটি ২০ লাখ টাকায় কিনে নেয়, যা সন্দেহের জš§ দেয়।’ ইউসিসিএলের শনাক্তকরণযোগ্য সম্পদের ন্যায্যমূল্য আগের জিএসকে (বাংলাদেশ) লিমিটেডের একটি অংশ বলে দাবি করে বিএসইসি।

সংস্থার পরিচালন সম্পদ ২০১৭ সালে ২৬৮ কোটি টাকা থেকে ২০২০ সালে কমে দাঁড়ায় মাত্র ৬৬ কোটি টাকায়। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির বার্ষিক টার্নওভার ছিল ৬৮০ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে এসে দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা এবং মুক্ত নগদ প্রবাহের পরিমাপ ২০১৩ সালে যা ছিল ২৩৩ কোটি, তা ২০২০ সালে এসে কমে ৪৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এটি পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত করে যে, ইউসিসিএল জিএসকে’র একটি হ্রাসকৃত রূপ, যা চিঠিতে দাবি করা হয়।

প্রসঙ্গত, সেনসোডাইন ও হজম সহায়তাকারী ইনোকে বাজারজাত করতে জিএসকে গ্রুপ ‘বুরোজ ওয়েলকাম অ্যান্ড কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড নামে একটি নতুন সহযোগী সংস্থা গঠন করে।

এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই ছয় দশক ধরে উৎপাদনে কার্যক্রম পরিচালনার পরে বাংলাদেশে কোম্পানিটির ওষুধ উৎপাদন ইউনিট বন্ধ করার ঘোষণা দেয় জিএসকে বাংলাদেশ। এছাড়া কোম্পানিটির মূল আর্থিক সূচকগুলো বিস্তৃত করার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

বিএসইসির পক্ষ থেকে ইউসিসিএল কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এমন কোনো চিঠি পায়নি বলে  শেয়ার বিজের কাছে দাবি করে বলে, ‘আমরা এখন পর্যন্ত বিএসইসির কাছ থেকে এ-জাতীয় কোনো চিঠি পাইনি। এমন কোনো চিঠি আমরা যদি পাই, তবে আমরা যথাসময়ে বিএসইসিকে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব। কর্তৃপক্ষ দাবি করে জিএসকে’র ব্র্যান্ড হরলিক্স, বুস্ট ও গ্ল্যাকসোজ-ডি এখন ইউসিসিএলের পণ্য।

এছাড়া কোম্পানিটিকে জিএসকে’র ব্র্যান্ড এবং অন্যান্য সম্পত্তিসহ ব্র্যান্ড ও অন্যান্য সম্পত্তি-সম্পর্কিত বিধানগুলো খতিয়ে দেখার জন্য কোম্পানি অধিগ্রহণের বিক্রয় ও ক্রয়ের চুক্তিও জমা দিতে বলেছে বিএসইসি।