Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:43 pm

ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা

 

 

বাংলা বর্ষবরণের এ সময়কার অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা সম্প্রতি ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। আমাদের জন্য এটি উৎসাহব্যঞ্জক খবর। যদিও বর্ষবরণের উৎসবে এটি তুলনামূলক নতুন উপাদান; কিন্তু অল্পদিনেই তা জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলেছে। প্রতি বছর নববর্ষে মানুষ আগ্রহভরে অপেক্ষা করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য। ঢাকায় কর্মরত ভিনদেশিদেরও এতে যোগ দিতে দেখা যায়।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া এ শোভাযাত্রার পরিসর দিন দিন বেড়েছে; বেড়েছে এর মাত্রা, পরিধি ও প্রভাব। শোভাযাত্রার বিভিন্ন ধরনের চারুকর্ম, বাদ্যযন্ত্র, প্রদর্শনী প্রতি বছরই যেন নবরূপ ধারণ করে! ঢাকার বাইরেও নানা জায়গায় নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে। জানামতে, বাংলাদেশে এমন শোভাযাত্রার প্রথম আয়োজন করে যশোরের চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, ১৯৮৬ সালে। রাজধানীকেন্দ্রিক উৎসবটি মিডিয়ার নজর কাড়লেও ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কারণে আগামী বছর থেকে ঢাকার বাইরে এরকম আয়োজন আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিতে কেবল যে উৎসবের জৌলুস বাড়ে তা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দেশের সুনাম, পরিচিতি, পর্যটন, ব্যবসা এমনকি মুক্তচিন্তার বিকাশ। ইউনেস্কোর মতে, এ শোভাযাত্রা বাংলাদেশের মানুষের অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার প্রতীকী রূপ। এটি মানুষের মনে ঐক্যেরও সঞ্চার ঘটায়। মঙ্গল শোভাযাত্রার যে রূপ আজ আমরা দেখি, তার পেছনে অনেক সংগ্রাম রয়েছে। একে কেন্দ্র করে বিতর্ক ছড়ানো হয়েছে, নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টাও কম হয়নি। সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে প্রতি বছরই মঙ্গল শোভাযাত্রা স্বরূপে প্রকাশিত হয়েছে। শুভবুদ্ধির প্রকাশ, নিজেকে মেলে ধরার আনন্দ, সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার উচ্ছ্বাস, সর্বোপরি পুরোনোকে ফেলে নতুনের আবাহনই এর প্রধান কারণ।

ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্থান করে দেওয়ায়। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়লো। যে সংস্কৃতির উত্তরাধিকার ধারণ করছি আমরা, তা যেন দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে, সেটি আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। মিডিয়ারও দায়িত্ব বেড়েছে—সারা দেশের মঙ্গল শোভাযাত্রার খবর ভালোভাবে প্রচার করা। এ থেকে আমরা যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেই উপকৃত হবো তা নয়; নববর্ষকে কেন্দ্র করে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ব্যবসার আয়োজন ঘটে। বিলুপ্তপ্রায় অনেক কুটির শিল্প, বিশেষত খেলনা, মাটি, কাগজ ও পাতার তৈরি উপকরণ ইত্যাদির জমজমাট আসর বসে। বসে মেলা। খাবারের সমারোহ ঘটে। গান-নাটক-যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়। বড়রা তো বটেই, এসবের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা যে আনন্দ পায়, তা আর্থিক নিক্তিতে মাপা যাবে না। এগুলো শিশু-কিশোর মনে গভীর প্রভাব ফেলে, তাদের বিকশিত হতে সহায়তা করে। পাশাপাশি বাড়ে পর্যটন। এভাবে তালিকা করলে তা অনেক লম্বাই হবে। বাংলাদেশের অনেক নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্বীকৃতি পেলেই যে সেগুলো মূল্যবান হয়ে ওঠে তা নয়; কিন্তু স্বীকৃতি বিশ্ব পরিমণ্ডলে নতুন মাত্রা স্থাপন করে। আগামী বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার আবেদন যে একটু ভিন্নতর হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।