নজরুল ইসলাম: রাজধানীর মিরপুর, ঢাকার সাভার ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় প্রচুর জমি কিনেছেন। করেছেন বাড়ি নির্মাণও। যুক্ত হয়েছেন পরিবহন ব্যবসায়। অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদ পেয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিটও (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে। তার এক কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৯৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে। তার নাম ইমতিয়াজ আহমেদ খান (মাসুম)। তিনি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।
দুদকের চার্জশিটের তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সালে মিরপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ৯৩১৬ নম্বর দলিলে ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের জমি কেনেন ইমতিয়াজ। সেই জমিতে ৪১ লাখ ১২ হাজার ১৯৯ টাকা মূল্যের ভবন নির্মাণ করেন। ২০১৬ সালে মিরপুরে ৪৯ নম্বর দলিলে সাত লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের জমি কেনেন। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সাভার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ৫৮৭৮ নম্বর দলিলে ছয় লাখ টাকা মূল্যের জমি কেনেন। এর আগের দিন সাভারে ৫৭৫৬ নম্বর দলিলে ২১ লাখ টাকা দিয়ে আরও একটি জমি কিনেছিলেন। ৩০ এপ্রিল সাভারে ৬৫৪৬ নম্বর দলিলে ২ লাখ ১২ হাজার টাকার একটি জমি কেনেন। ২০০৯ সালের ৯ নভেম্বর তারিখে নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ১০৭৮ নম্বর দলিলে এক কোটি ৭০ লাখ ২১৬ টাকার জমি কেনেন। একই বছরের ১১ অক্টোবর ৩৪৯৩ নম্বর দলিলে আট লাখ ৪৬ হাজার ১৫৩ টাকার জমি কেনেন, সেই জমিতে থাকা ভবনের মূল্য ৪০ লাখ টাকা। ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর ৪৩৬০ নম্বর দলিলে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের জমি কেনেন। সব মিলিয়ে তদন্তকালে তার স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে এক কোটি ৭৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৮ টাকা।
এক লাখ টাকার এক নলা শটগান, মীম হোম লিমিটেডে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, জিসান পরিবহন লিমিটেডে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ারসহ মোট ২১ লাখ ৮২ হাজার ৭৭৭ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। সে হিসেবে তদন্তকালে পাওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণ মোতাবেক তিনি ৩৭ লাখ ১২ হাজার ১৯৯ টাকার স্থাবর এবং পাঁচ লাখ ৮২ হাজার ৭৭৭ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ গোপন করেছেন। তিনি মোট ৪২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৭৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ গোপন করে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ধারার অপরাধ করেছেন। তদন্তকালে আসামি বা তার বাবার নামে রাজধনীর ক্যান্টনমেন্ট থানার জোয়ারসাহারা মৌজায় ৭০০ শতক জমির মালিকানার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তদন্তকালে গোপন করা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদসহ মোট দুই কোটি ৪৬ হাজার ৩৪৫ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার নামে ২০০৯-১০ করবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ করবর্ষ সময়ে বাড়িভাড়া, দোকানভাড়া, মায়ের কাছ থেকে ধারসহ মোট ৮০ লাখ ৫৪ হাজার ৭৩২ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে। আয়কর নথি মোতাবেক পারিবারিক ব্যয় ও পরিশোধিত আয়করসহ মোট ২২ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ টাকা ব্যয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। আয় থেকে তার ব্যয় বাদ দিলে নিট সঞ্চয় থাকে ৫৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩৫২ টাকা। অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থেকে নিট সঞ্চয় বাদ দিয়ে এক কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৯৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এটি দাখিল করেছেন উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম।
২০১৯ সালের ১৫ জুলাই সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির সুপারিশসহ কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সম্পদ বিবরণীর দাখিলের নোটিশের পর একই বছরের ২ ডিসেম্বর তিনি সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সেখানে সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান এক কোটি ৪১ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৯ টাকার স্থাবর ও ২২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৪২ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেন। সম্পদ বিবরণী যাচাই ও অনুসন্ধানকালে তার নামে এক কোটি ৭৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৮ টাকার স্থাবর ও ২২ লাখ ৮২ হাজার ৭৭৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি ৩৭ লাখ ১২ হাজার ১৯৯ টাকা মূল্যের স্থাবর এবং ১৫ হাজার ৪৩৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেন। অনুসন্ধানকালে এক কোটি ১৯ লাখ ৯ হাজার ৯৯৩ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পেয়েছিল দুদক। পরে ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১১ সালে অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদকের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইমতিয়াজ আহমেদ খান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো খুলেছিলাম, কোনো কার্যক্রম করা হয়নি। আমার স্ত্রী আর আমি মিলে কোম্পানি দুটি বানিয়েছিলাম। সাভারের জমিগুলো আমরা দুজনে শুধু বায়না করেছিলাম। জিসান পরিবহন কোনোদিনই চলেনি। মীম হোম শুধু শুরু করেছিলাম, ট্রেড লাইসেন্সও নিইনি। ক্যান্টনমেন্ট থানার জোয়ারসাহারার জমি আমার বাবার, সেগুলো বসুন্ধরা দখল করে নিয়েছে। বিরোধী পক্ষরা দুদকে আমার বিরুদ্ধে দরখাস্ত দিয়েছিল। আমার এক তিল সম্পদও গোপন করিনি।’ তিনি এখন রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকায় বসবাস করেন।