Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:56 pm

‘ইউরোপে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক অংশীদার তুরস্ক’

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউরোপে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক অংশীদার তুরস্ক-এমনই জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক শীর্ষ কূটনীতিক। খবর: ডেইলি সাবাহ।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক জিন তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে এক সাক্ষাৎকারে এমনই জানিয়েছেন। তিনি তুরস্ককে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে আখ্যা দিয়েছেন। এছাড়া আরও বলেন, তুরস্কে বর্তমানে তার দেশের ১৬০টি প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

পার্ক তুরস্কে তিন দিনের সফর করেন। গত সোমবার তার সফর শেষ হয়। সফরকালে তিনি তুরস্ককে ‘রক্তের ভাই’ বলে মনে করেন। দেশ দুটির ভবিষ্যতে আরও অর্থবহ ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের আরও উন্নতির আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কোরিয়ার যুদ্ধে সর্বোচ্চ চতুর্থ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ ছিল তুরস্ক। এ বিষয়টি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে পার্ক বলেন, তুরস্কের ত্যাগের জন্য আমাদের দেশের মানুষ সবসময় কৃতজ্ঞ।

দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে পার্ক বলেন, প্রতিরক্ষা শিল্পে দুই দেশের সহযোগিতার ইতিহাস দীর্ঘ। এ সময় তিনি তুরস্কের যুদ্ধযান অলটায় ট্যাংকের কথা বলেন, যা দুই দেশের কারিগরি সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছে।

পার্ক বলেন, তিনি গত সপ্তাহে ইস্তান্বুলে ১৬তম ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি ফেয়ার (আইডিইএফ’২৩) ঘুরে দেখেন এবং সে সময় তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ারিস গুয়েলারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আইডিইএফ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষা মেলা।

মেলায়র এক ফাকে পার্ক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরদোয়ান এ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে তার দেশ ভ্রমণের আহ্বান জানান। দুই দেশের মধ্যে যে নানা খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান, বিশেষ করে রাজনীতি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি ও বাণিজ্যে যে সুসম্পর্ক রয়েছে তা উল্লেখ করেন। তুরস্কের নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ ডলারে বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।

‘আমরা প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করি। দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কের মধ্যে এই খাতে সহযোগিতার চমৎকার উদাহরণ রয়েছে, যেমন অলটায় যুদ্ধযান এবং কে৯’, বলেন পার্ক। এছাড়া সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন।

সফরকালে তুরস্কে গত ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্পের বিষয়টি উল্লেখ করেন পার্ক। তিনি বলেন, এ দুর্যোগের পর তুরস্ককে মানবিক সহায়তাস্বরূপ ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলার দেয় দক্ষিণ কোরিয়া।

ভূমিকম্পের পর থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার অস্থায়ী আবাস নির্মাণ করে দিয়েছে কোরিয়া। এসব স্থানে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এ দুর্যোগের ফলে আহত সবাইকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন পার্ক। তিনি বলেন, দুর্গতদের টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন ফিরিয়ে দিতে কাজ করছে তার সরকার।

পার্ক বলেন, দুই দেশের মধ্যকার শিল্প সহযোগিতার ভবিষ্যৎ বেশ উজ্বল। মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত তুরস্কের দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৩৮০ কোটি ডলারে এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

শুধু শিল্প খাতে নয়, তুরস্কের সাংস্কৃতিক খাতেও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। পার্কের মতে, শিল্প খাতের মতোই গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক খাতে বিনিয়োগ। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস তুরস্কে যে কেবল কোরিয়ার সংস্কৃতির বিকাশ হয়েছে, তা নয়, কোরিয়ায়ও তুরস্কের সাংস্কৃতিক সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং এতে দুই দেশই উপকৃত হচ্ছে।

ক্যাপশন: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তুরস্কের নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ ডলারে বৃদ্ধির ওপর জোর দেন
ডেইলি সাবাহ