ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় দাম বেশি মধ্যপ্রাচ্যের টিকিটের

হামিদুর রহমান : ট্রাভেলিংয়ের সময় বলা হয় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ওই সময়ে সাধারণত এয়ার টিকিটের মূল্য তুলনামূলক বেশি থাকলেও, এ বছর ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চ মাস শুরু হলেও ভাড়া কমছে না। বিগত বছরগুলোয় এই সময়ে দাম কম থাকলেও এ বছর চিত্র উল্টো। ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে কম দূরত্বের দেশ মধ্যপ্রাচ্যর ভাড়া এখনও প্রায় দ্বিগুণ। এদিকে ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েও সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।        

প্রবাসীদের চাপ আগের তুলনায় কমলেও মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলোর বিমান ভাড়া কমেনি। যাত্রীদের অভিযোগ, অগ্রিম টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। টিকিট সংকট কমলেও ভাড়া কমছে না। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণেই যাত্রীদের চড়া দামে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই টিকিটের এত দাম দিতে হচ্ছে না।

অনেক প্রবাসী টিকিট ভাড়া কমার অপেক্ষায় থেকেও আশানুরূপ বাজেটে টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন না। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ভয়ে এখনও বাধ্য হয়ে টিকিট করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ প্রবাসীরা।

প্রবাসীরা জানান, ‘ইউরোপে আমেরিকার টিকিটেও এতটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। সরকার সাধারণত যাত্রীদের সঙ্গে অন্যায় করছে। না হলে এত দিনেও টিকিটের মূল্য কমাতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মাঝে কিছু উদ্যোগ নিলেও সরকার টিকিটের মূল্য কমাতে পারেনি, উল্টো ব্যর্থ হয়েছে। এটি সত্যিই লজ্জার।

সৌদি আরব প্রবাসী হুমায়ুন কবির জানাস, ‘দেশে এসেছি পাঁচ মাস হলো। ডিসেম্বরেও সৌদি ফেরার কথা ছিল। টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় ফোন করে ছুটি বাড়িয়েছি। ভেবেছিলাম, ফেব্রুয়ারির শেষ হলেই টিকিটের মূল্য কমবে। সাধারণত মার্চ মাসে টিকিটের খুব চাপ থাকে না। দাম কমে যায়। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারি শেষ, মার্চ মাসের টিকিটের আশানুরূপ দাম কমছে না।’ 

কুয়েত প্রবাসী কামরুজ্জামান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে ২ তারিখ কুয়েত যাওয়ার কথা থাকলেও টিকিটের চাপ না কমায় সময় নিলাম। এখন সামান্য কিছু দাম কমলেও এ সময়ের জন্য এটি অস্বাভাবিক। এই সময়ে টিকিটের এত দাম পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। বাংলাদেশ থেকে যে কোনো দেশে যেতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এখানে সরাসরি সরকারের লোক জড়িত, তা না হলে এটা সম্ভব হয় কীভাবে!’

যাত্রীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের চেয়েও বেশি দূরত্বের দেশে ভাড়া কম। আবার পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিমানের টিকিটের দাম তুলনামূলক কম। সরকারের ব্যর্থতার কারণেই টিকিটের বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। এই বাড়তি ভাড়া জোগাতে অনেকেরই হিমশিম অবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যে যারা থাকেন তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। বর্তমানে টিকিটের যে মূল্য, তা একজন শ্রমিকের কয়েক মাসের উপার্জন চলে যাচ্ছে।

বিমানবন্দরে আরও এক যাত্রী বলেন, সৌদি আরব যারা যাচ্ছেন তাদের টিকিটপ্রতি ৭০ থেকে ৯০ হাজার পড়ে যাচ্ছে। সেখানে যেতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগে। আর আমেরিকা যেতে ২৩-২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু সেখানে যেতে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা লাগে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তানে কোথাও দাম বাড়েনি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে দাম বাড়তি। এটা অবশ্যই সিন্ডিকেট।

এদিকে ট্রাভেলস কোম্পানিগুলো জানায়, ‘এখানে ভাড়া কমবেশির যে বিষয়টি এটি আসলে এয়ারলাইনসের ওপর নির্ভর করে। ট্রাভেলস কোম্পানিগুলোর কিছু করার নেই। কম ভাড়ার টিকিটগুলো নানাভাবে তারা আগেই সব লক করে রাখে। যার কারণে আমরা কম ভাড়ার টিকিটগুলো পাই না।’

আটাবের সদস্য এম শাহাদাত হোসেন তসলিম জানান, ‘টিকিটের সমস্যা-সমাধান নিজেদের কাছে নেই, কারণ দাম নির্ধারণ করে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। দাম আগে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ছিল, সেটাকে এখন এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে গেছে। সবগুলো এয়ারলাইনস কিন্তু একই মাত্রায় ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। এয়ারলাইনসগুলো যেন ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় সিন্ডিকেট করছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০