বীর মুক্তিযোদ্ধা উক্য চিং বা ইউ কে চিং মারমার দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র নৃগোষ্ঠীভুক্ত বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
ইউ কে চিং বান্দরবান জেলার উজানী পাড়ায় ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি রংপুর ইপিআর উইংয়ের অধীন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন।
একাত্তরের মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিওপিতে কর্মরত এক বিহারি কর্মকর্তা ও দুই পাঞ্জাবি সৈন্যকে হত্যা করে ফাঁড়ির অবশিষ্ট ৯ বাঙালি ইপিআর সৈনিককে নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়ার পর তিনি পাটগ্রাম এলাকায় অবস্থান নেন। পরে ইপিআরের একজন সদস্য হিসেবে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জের অন্তর্গত সীমান্তবর্তী এলাকা চৌধুরীহাট। নভেম্বরের মাঝামাঝি একদল মুক্তিযোদ্ধা সেখানে অবস্থান নেন। তাদের একটি দলে ছিলেন ইউ কে চিং। সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্ত অবস্থান ছিল। রাতে তারা পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে আক্রমণ চালান। ভোরে পাকিস্তানি সেনাদের দিক থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। রায়গঞ্জের পূর্ব দিকে দুধকুমার নদ। ইউ কে চিংরা ও লেফটেন্যান্ট সামাদ ছিলেন এর উত্তর পারে। তারা রায়গঞ্জের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশে পড়েন।
সেখানে একটি সেতুর নিচে বা বাংকারে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ক্যামোফ্লেজ করা একটি এলএমজি পজিশন। রেকি করার কাজে জড়িত মুক্তিযোদ্ধারা কেউই পাকিস্তানি সেনাদের ওই অবস্থান সম্পর্কে টের পাননি। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পাওয়ামাত্র সেখান থেকে পাকিস্তানি সেনারা বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর লেফটেন্যান্ট সামাদ, আশফাকুস সামাদ বীর উত্তমসহ তার আরও কয়েকজন সহযোদ্ধা শহিদ হন।
ইউ কে চিং চৌধুরীহাট ছাড়াও হাতীবান্ধা, পাখিউড়া, ভূরুঙ্গামারী, রৌমারীসহ কয়েকটি জায়গায় সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অস্ত্র ছাড়াও তিনি কখনও কখনও আদিবাসীদের নিজস্ব প্রতিরোধ ও আত্মরক্ষার কৌশল প্রয়োগ করেও যুদ্ধ করেন। বিডিআরের চাকরি থেকে ১৯৮২ সালে তিনি অবসর নেন। ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা ইউকে চিং মারমা বীর বিক্রম মৃত্যুবরণ করেন।