নিজস্ব প্রতিবেদক: ইএফডি মেশিন রয়েছে। কিন্তু ভ্যাট ফাঁকি দিতে ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে হাতে লেখা কাঁচাচালান। ননী সুইটস নামে একটি মিস্টান্ন দোকানে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। রাজধানীর উত্তরার এই প্রতিষ্ঠানে অভিযানের সময় ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছেন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। লেনদেনের তথ্য যাচাইয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব বিবরণী তলব করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মহাপরিচালক জানান, রাজধানীর উত্তরার ননী সুইটস-এ ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান চালানো হয়েছে। ইএফডি চালানের পরিবর্তে কাঁচাচালান ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন। ৪০টি কাঁচাচালানের বই উদ্ধার করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল রাজধানীর উত্তরাতে অবস্থিত ননী সুইটস নামের মিস্টান্ন দোকানে অভিযান পরিচালনা করে ইএফডি মেশিনের পরিবর্তে কাঁচাচালান ইস্যু করে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব দেখতে পান। ননী সুইটস, সোনারগাঁও জনপদ রোড, সেক্টর-১১, উত্তরা, ঢাকা এবং প্রতিষ্ঠানটির ফ্যাক্টরি: ধউর, তুরাগে অবস্থিত।

তিনি বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা উত্তরার ননী সুইটস দোকানে গিয়ে মিস্টি কিনলে মূসক-৬.৩ চাওয়া সত্ত্বেও তাকে কাঁচাচালান দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইএফডি মেশিন বসানো থাকলেও ইএফডিতে চালান না কর্তন করে কাঁচাচালানে পণ্য বিক্রয় করায় ঐ ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের পরে সংস্থার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন ৫ ডিসেম্বর রোববার বিকেল ৩ টায় ঐ দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে গোয়েন্দার দল ওই ক্রেতার অভিযোগের সত্যতা পায়। অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির উত্তরার শো-রুমে ক্রেতার দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটিতে ইএফডি মেশিন থাকলেও কাঁচাচালানে মিষ্টি বিক্রি করছে মর্মে গোয়েন্দা দল সরেজমিনে দেখতে পান। এসময় প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০টি অবৈধ কাঁচাচালানের বই জব্দ করা হয়; যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অধিকাংশ ক্রেতাকে বিক্রয় রশিদ হিসেবে প্রদান করে থাকে। এসব রশিদ যাচাই করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের কোন নিবন্ধন নম্বর ও ভ্যাট এর পরিমাণ এতে উল্লেখ নেই। আইন অনুসারে এগুলো ‘ভ্যাট চালান’ (মূসক-৬.৩) নয়। প্রতিষ্ঠানটির টঙ্গীর ধউর এ অবস্থিত ফ্যাক্টরিতে গিয়েও একই ধরণের অনিয়ম পাওয়া যায়। সেখানেও মূসক-৬.৩ ব্যতিরেকে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে মর্মে অনুসন্ধানে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা শহরে পাঁচটি শো-রুম আছে এবং ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় কেন্দ্রিয়ভাবে নিবন্ধিত। উল্লেখ্য, আইন অনুসারে যে সব শো-রুমে ইএফডি বসানো হয়েছে সেগুলোতে ক্রেতাকে আবশ্যিকভাবে ইএফডি-তে বিক্রয় রশিদ প্রদান করা বাধ্যতামুলক। ইএফডি-তে ভ্যাট চালান প্রদান করলে তা এনবিআরের সেন্ট্রাল সার্ভারে রেকর্ড হয়ে যায় এবং তা মাসিক ভ্যাট হিসাবের জন্য নির্ধারিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ক্রেতার দেয়া ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে, ইএফডি-তে প্রদত্ত চালান এনবিআর কর্তৃক প্রতিমাসের পুরস্কার ঘোষণার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কূপন হিসেবে বিবেচিত হয়। ননী-তে ইএফডি বসানো স্বত্ত্বেও তা ব্যবহার না করা ক্রেতাদের সাথে প্রতারনার সামিল এবং ভ্যাট আইন অনুসারে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মহাপরিচালক জানান, প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এর কর্পোরেট শাখা এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক, উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ রোড শাখায় হিসাব বিবরণী তলব করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়েরসহ অন্যান্য আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটকে এই মিস্টান্ন দোকানকে নিয়মিত মনিটরিং এর মাধ্যমে যথাযথ ভ্যাট আদায়ের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যথাযথভাবে ইএফডি-তে ভ্যাট চালান ইস্যুর বিষয়ে আরো নজরদারি করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।
###