Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 1:07 pm

ইএফডির পরিবর্তে কাঁচা চালান ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে ননী সুইটস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইএফডি মেশিন রয়েছে, কিন্তু ভ্যাট ফাঁকি দিতে ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে হাতে লেখা কাঁচা চালান। ননী সুইটস নামে একটি মিষ্টান্নের দোকানে ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। রাজধানীর উত্তরার এ প্রতিষ্ঠানে অভিযানের সময় ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ পেয়েছেন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। লেনদেনের তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব বিবরণী তলব করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মহাপরিচালক জানান, ননী সুইটসে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযান চালানো হয়েছে। ইএফডি চালানের পরিবর্তে কাঁচা চালান ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন। ৪০টি কাঁচা চালানের বই উদ্ধার করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল ননী সুইটস নামের মিষ্টান্নের দোকানে অভিযান পরিচালনা করে ইএফডি মেশিনের পরিবর্তে কাঁচা চালান ইস্যু করে ভ্যাট ফাঁকির মহোৎসব দেখতে পান। ননী সুইটস, সোনারগাঁও জনপদ রোড, সেক্টর-১১, উত্তরা, ঢাকা এবং প্রতিষ্ঠানটির ফ্যাক্টরি ধউর, তুরাগে অবস্থিত।

তিনি বলেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা ননী সুইটস থেকে মিষ্টি কিনলে মূসক-৬.৩ চাওয়া সত্ত্বেও তাকে কাঁচা চালান দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইএফডি মেশিন বসানো থাকলেও ইএফডিতে চালান না কর্তন করে কাঁচা চালানে পণ্য বিক্রি করায় ওই ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের পর সংস্থার উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন গত রোববার বিকাল ৩টায় ওই দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে গোয়েন্দার দল ওই ক্রেতার অভিযোগের সত্যতা পায়। অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির উত্তরার শোরুমে ক্রেতার দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ইএফডি মেশিন থাকলেও কাঁচা চালানে মিষ্টি বিক্রি করছে বলে গোয়েন্দা দল সরেজমিনে দেখতে পায়। এ সময় প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০টি অবৈধ কাঁচা চালানের বই জব্দ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানটি বেশিরভাগ ক্রেতাকে বিক্রয় রশিদ হিসেবে দিয়ে থাকে। এসব রশিদ যাচাই করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের কোনো নিবন্ধন নম্বর ও ভ্যাটের পরিমাণ এতে উল্লেখ নেই। আইন অনুসারে এগুলো ‘ভ্যাট চালান’ (মূসক-৬.৩) নয়। প্রতিষ্ঠানটির টঙ্গীর ধউরে অবস্থিত ফ্যাক্টরিতে গিয়েও একই ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়। সেখানেও মূসক-৬.৩ ব্যতিরেকে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে দেখা যায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা শহরে পাঁচটি শোরুম আছে এবং ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত। উল্লেখ্য, আইন অনুসারে যেসব শোরুমে ইএফডি বসানো হয়েছে, সেগুলোয় ক্রেতাকে আবশ্যিকভাবে ইএফডিতে বিক্রয় রশিদ দেয়া বাধ্যতামূলক। ইএফডিতে ভ্যাট চালান দিলে তা এনবিআরের সেন্ট্রাল সার্ভারে রেকর্ড হয়ে যায় এবং তা মাসিক ভ্যাট হিসাবের জন্য নির্ধারিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় ক্রেতার দেয়া ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই।

অন্যদিকে ইএফডিতে প্রদত্ত চালান এনবিআর কর্তৃক প্রতিমাসের পুরস্কার ঘোষণার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কুপন হিসেবে বিবেচিত হয়। ননীতে ইএফডি বসানো সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল এবং ভ্যাট আইন অনুসারে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মহাপরিচালক জানান, প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম অনুসন্ধানের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের করপোরেট শাখা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, উত্তরা, সোনারগাঁও জনপথ রোড শাখায় হিসাব বিবরণী তলব করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা দায়েরসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটকে এ মিষ্টান্নের দোকানকে নিয়মিতভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যথাযথ ভ্যাট আদায়ের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যথাযথভাবে ইএফডিতে ভ্যাট চালান ইস্যুর বিষয়ে আরও নজরদারি করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।