Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 7:22 pm

ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে রাবির ফটোস্ট্যাট দোকানগুলো, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

মনির হোসেন মাহিন, রাবি: দুদিন আগে ফটোকপির দোকান থেকে আইডি কার্ডের অনলাইন কপি বের করে নিলাম ৩০ টাকা দিয়ে। সেই কপিটি হারিয়ে যাওয়ায় আজকে তুলতে এসে ৫০ টাকা দিতে হয়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে ২০ টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। আমাদের কাছ থেকে চড়া দাম রেখে ব্যবসা করছে ক্যাম্পাসের ফটোস্ট্যাট দোকানগুলো। এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী মোহনা আক্তার। শুধু ওই শিক্ষার্থীই না, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কম্পিউটার ও ফটোস্ট্যাট দোকানগুলো চড়া দাম নিচ্ছে বলে অনেক শিক্ষার্থীরই অভিযোগ। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোকপি ও কম্পিউটারের দোকান মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবসা করছেন। যে যেমন পারছেন বাড়তি দাম রাখছেন। যে কাজ অল্প সময়ে করে ভালো টাকা পাওয়া যায় কেবল সেগুলোই করে দিচ্ছেন দোকানিরা। টাইপিংয়ের কাজ বা জটিল কোনো কাজ যেখানে সময় বেশি লাগবে এসব কাজ করেন না বলে তারা শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বর ও ড. মো. ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের সামনে কম্পিউটারের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের বেশ ভিড়। কেউ একাডেমিক কাজ, কেউ আবার প্রশাসনিক কাজ বা সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কাজ করতে এসেছেন। এসব কাজ শেষ করতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষার্থীদের। আবার যাদের কাজ সময়সাপেক্ষ এমন কাজ করেন না বলে মানা করে দিচ্ছেন কম্পিউটার দোকানিরা। ফলে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে ফটোকপি করলে প্রতি পৃষ্ঠা এক টাকা করে নেয়া হলেও এখন তা দেড় থেকে দুই টাকা করে রাখা হচ্ছে। ডকুমেন্ট স্ক্যান করে মেইল করে পাঠালেই ২০ টাকা দিতে হচ্ছে তাদের। টাইপিং করে প্রিন্ট আউট করলেই রাখা হচ্ছে চড়া দাম। আইডি কার্ড, হল কার্ড, সার্টিফিকেট ও ছবি লেমিনেটিং আগে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে নেয়া হলেও এখন তা ২০ থেকে ৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ভর্তি ও চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করলেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। টুকিটাকি চত্বরের দোকানগুলো ক্যাম্পাসের কেন্দ্রবিন্দুতে হওয়ায় সেখানে সব থেকে বেশি দাম রাখা হচ্ছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অর্পণ ধর শেয়ার বিজকে বলেন, একই জিনিস প্রিন্ট আউট করতে পরিবহন মার্কেটে নিচ্ছে এক রেট এবং টুকিটাকি চত্বরে নিচ্ছে আরেক রেট। পরিবহনে প্রিন্ট করলে তিন টাকা নিলে টুকিটাকিতে দিতে হয় পাঁচ টাকা। টুকিটাকি চত্বর একাডেমিক ভবনগুলোর পাশে হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ওই দিকে বেশি ঝোঁকে আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রীতিমতো ডাকাতি করছে দোকান মালিকরা।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, টাইপিংয়ের কাজ নিয়ে গেলে টাইপিংয়ের কাজ করি না বলে জানান দোকানিরা। চাকরির আবেদন করতে আগের তুলনায় এখন বেশি টাকা গুনতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে হওয়ায় টাকা কম নেয়ার পরিবর্তে টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। ফলে অনেক সময় ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে আবেদন করতে হয় আমাদের।

শিমুল কম্পিউটারের মালিক শিমুল বলেন, টাইপিংয়ের দাম কিছুটা বেড়েছে এবং কাগজের দাম বাড়ায় ফটোকপির দাম তুলনামূলক একটু বেশি নেয়া হচ্ছে। ভালো পেপার হলে দাম বেশি রাখা হয় এবং পেপার নরমাল হলে দাম কিছুটা কম রাখা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যলয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, আমি এ কাজের তদারকির দায়িত্বে নেই। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যদি এমন করা হয় তাহলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমি আজকেই ওই দপ্তরের দায়িত্বে থাকা দপ্তর প্রধানের সঙ্গে কথা বলব এবং দোকানগুলোতে অভিযান চালাব।

ফটোস্ট্যাট দোকানের তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট দপ্তরের প্রধান জাহেদ আলী শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের কাছে কোনো শিক্ষার্থী অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ ছাড়া আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। দাম বাড়তি নিচ্ছে এমন অভিযোগ করে দোকানের নামসহ যদি কোনো শিক্ষার্থী আমাদের কাছে আবেদন করে, সত্যতা প্রমাণিত হলে ওই দোকান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে দোকান সিলগালা করা হবে।