নিজস্ব প্রতিবেদক : জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি কমানো, বায়ুদূষণ ও কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ এবং সাশ্রয়ী যোগাযোগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ইজি বাইক ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যানবাহন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) উদ্যোগে সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে ইজিবাইকের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়।
গবেষণায় জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রায় ১৪ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) আছে। এর অধিকাংশই এ দেশের স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়। ইজিবাইক নির্মাণ, চালনা, মেরামত ও চার্জিংয়ের সঙ্গে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের কর্মসংস্থান যুক্ত হয়ে আছে।
দেশে যথাযথ জনপরিবহন-ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামীণ ও শহুরে সাধারণ যাতায়াতকারীদের জন্য ইজিবাইক বা অটোরিকশা একটি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। প্রায় আড়াই কোটি মানুষ স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের জন্য ইজিবাইক ব্যবহার করে থাকেন।
গবেষণাটির অন্যতম গবেষক কানিজ রাবেয়া বলেন, ‘এই যানবাহন দেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ৯৭ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার অবদান রাখে। এর মধ্যে ইজিবাইক নির্মাণ খাত সাত হাজার ৫০০ কোটি, ব্যাটারি তৈরি ও বাজারজাত খাত আট হাজার কোটি টাকা এবং চালনা, মেরামত ও চার্জিং খাত ৮২ হাজার ১২৫ কোটি টাকার ভূমিকা পালন করে।’
ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের অলস সক্ষমতা কমাতে ইজিবাইক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি বছর ইজিবাইক চার্জ দিতে প্রায় ৪৯০ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ দরকার হয়; যা ৬৫৯ মেগাওয়াটের সমান। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে ৬৪.২ শতাংশ অতিরিক্ত সক্ষমতা রয়েছে। ইজি বাইকগুলোর অন্তত ৫.৬৪ শতাংশ কমানোয় ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, প্রচলিত যানবাহনের তুলনায় ইজিবাইকের জ্বালানি খরচ সব থেকে কম। একটি ইজিবাইকের প্রতি কিলোমিটারে জ্বালানি খরচ হয় ০.৯৭ টাকা, যা প্রাইভেটকারের (প্রিতি কিলোমিটারে ৮.৬০ টাকা) তুলনায় ৯ ভাগের এক ভাগ। প্রতি কিলোমিটারে বাসযাত্রায় খরচ হয় ২ টাকা ১৫ পয়সা। ইজি বাইকের প্রকৃত খরচ তার থেকেও কম।’
ক্লিনের গবেষণা কর্মকর্তা ও অন্যতম গবেষক সেজিনা খান বলেন, ‘দুর্ঘটনা-প্রবণ হলেও ইজিবাইক অন্তত ট্রাক, লরি, বাস ও মোটরসাইকেলের তুলনায় নিরাপদ। বিগত সাত বছরের (২০১৭ থেকে ২০২৩) সালের দুর্ঘটনা প্রতিবেদন অনুসারে, মোট দুর্ঘটনার ৮.৬ শতাংশের জন্য ইজিবাইক দায়ী। অথচ ট্রাক ও লরির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৭ শতাংশ, মোটরসাইকেলের কারণে ২৪.৬ শতাংশ এবং বাসের কারণে ১৫.৭১ শতাংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহরের সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের তুলনায় ইজিবাইক সব থেকে সবুজ যানবাহনও বটে। প্রতি কিলোমিটারে ইজিবাইক (ব্যাটারিচালিত অটেরিকশা) ৪৯.৫৬ গ্রাম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে। পক্ষান্তরে, একটি ১ হাজার ৫০০ সিসি প্রাইভেটকার থেকে নির্গত হয় ১৫৯.১৬ গ্রাম ও মাইক্রোবাস থেকে ১৯৮.০৩ গ্রাম।’
ইজিবাইক আরও নিরাপদ ও সবুজ করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গবেষকরা ১০ দফা সুপারিশ করেন।