Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:53 am

ইজিয়ারের সাতসতেরো

অ্যাপে ডাকলেই হাজির হবে অ্যাম্বুলেন্স। ইজিয়ার নামের একটি অ্যাপ দিচ্ছে এমন সেবা। দেশের ৫১২ উপজেলায় পাওয়া যাবে অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি এই সেবা। অ্যাপটি নিয়ে লিখেছেন হামিদুর রহমান

চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল অনেক দিন ধরে। কাজও চলছিল সেটি নিয়ে। এক বছর ধরে অ্যাপটি নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। গত মাসে সাধারণ মানুষের কাছে এই জরুরি সেবার সহজ মাধ্যমটি অবমুক্ত করা হয়। ইজিয়ার টেকনোলজিস লিমিটেডের ইজিয়ার অ্যাপটি দিচ্ছে রাইড শেয়ার সেবার পাশাপাশি উন্নতমানের অ্যাম্বুলেন্স সেবাও। মোবাইল ফোন বা ট্যাবে অ্যাপটি ইনস্টল করে এই সেবা যে কেউ ২৪ ঘণ্টার যেকোনো সময়ে নিতে পারবেন। ইজিয়ারে বর্তমান এক হাজার পাঁচশ’টির বেশি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত রয়েছে। শিগগিরই চার হাজারের ঘরে যাবে সংখ্যাটি, শুধু ঢাকাতে। আরও ১০ হাজার অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত হবে দেশজুড়ে।
ইজিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা যে একেবারে কম তা নয়। রাজধানীতে গড়ে দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আট থেকে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স থাকে।

অ্যাম্বুলেন্স ও সেবা
ইজিয়ার অ্যাপে এক ধরনের অ্যাম্বুলেন্সই পাওয়া যাচ্ছে। এই অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে দক্ষ ড্রাইভার, অক্সিজেন, এয়ারকুলার, অ্যাসিসটেন্ট ও স্ট্রেচার। কল করলে আশপাশে এক থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে থাকা অ্যাম্বুলেন্স থেকে যোগাযোগ করবে। যদি তিনি সাড়া না দেন তবে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে কলটি চলে যাবে। এছাড়া কল সেন্টারে ফোন দিয়েও পাওয়া যাবে এই সেবা। সেক্ষেত্রে ইজিয়ার কল সেন্টারে (০৯৬০৪৭০০৭০০ নম্বর) ফোন দিতে হবে। তাহলে সেখান থেকেই অ্যাম্বুলেন্স কনফার্ম করা হবে। ঠিকানা অনুযায়ী চলে আসবে গাড়িটি। ড্রাইভার ফোনে যোগাযোগ করবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে অন্য জেলায় যেতে হলে ইজিয়ার অ্যাপের রাইড লেটার হিসেবে খরচ গুনতে হবে। এখানেও বাজারে যে রেট আছে তার চেয়ে কম পড়বে।

অ্যাপ ইনস্টল
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে গুগল প্লে-স্টোরে। বুুুৎ লিখে সার্চ দিলে চলে আসবে অ্যাপ। এরপর ইনস্টল বাটনে ক্লিক করলে ডাউনলোড হতে থাকবে। অ্যাপের সাইজ ১৪ মেগাবাইট। ইনস্টল হওয়ার পরে অ্যাপে ক্লিক করলে সবুজ রঙের একটি ডিসপ্লে দেখা যাবে। সেখানে নেক্সট বাটনে ক্লিক করতে হবে। একে একে আসবে গেট অফারস, কার-অন-ডিমান্ড, বাইক-অন-ডিমান্ড। এই অপশনগুলো আপনি চাইলে স্কিপ বা নেক্সট করতে পারেন।
এরপর আসবে লাইভ সাপোর্ট, সেখানে গট ইট অপশনে ক্লিক করতে হবে। চালু হবে ইজিয়ার অ্যাপ।
সবুজ পর্দায় ট্র্যাফিক জিপিএস আইকন মিলিয়ে লোগো দেখতে পাবেন। এরপর আসবে গেট স্টার্টেড। দিতে হবে মোবাইল ফোন নম্বর। নম্বর দিলে ভেরিফিকেশন কোড আসবে। এক মিনিটের মধ্যে পাঁচ ডিজিটের কোড দিতে হবে। এরপর আপনার নাম, লিঙ্গ, ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিতে হবে। অ্যাপ চালু হওয়ার পর ডান দিকে ইজিয়ার লেখায় ক্লিক করে অ্যাপ-সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য পাবেন। হিস্ট্রি, ট্রিপ, প্রমোকোড, ইনভাইটস ফ্রেন্ডসহ সাপোর্ট অপশন রয়েছে। এটি শুধুই একবার ইনস্টল করতে হবে।
অ্যাম্বুলেন্সের রাইড নেওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাপে দেখা যাবে একটি লাল রঙের বৃত্তের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স আইকন। সেখানে ক্লিক করলে অ্যাম্বুলেন্সে কী ধরনের সেবা পাবেন তা দেখা যাবে অক্সিজেন, এয়ারকুলার, অ্যাসিসটেন্ট, স্ট্রেচার প্রভৃতি। আপনাকে দিতে হবে রিকোয়েস্ট। লোকেশনের সেক্ষেত্রে সবুজ বৃত্তের ঘর জিপিএসের সুবিধার জন্য বর্তমান লোকেশন দেখাবে বা যেটি সিলেক্ট করে দেবেন সেটি থাকবে। এছাড়া নির্ধারিত স্থানটি লাল বৃত্তের ঘরে লিখতে হবে। এরপর ক্লিক করতে হবে কনফার্ম অপশনে। এবার এস্টিমেটেড ফেয়ার উঠবে, সেটি কনফার্ম করতে চাইলে ‘ওকে’ ক্লিক করতে হবে। বর্তমানে অ্যাপটি শুধু অ্যানড্রয়েড ফোনের জন্য প্রস্তুত। তবে আইওএসের জন্য কাজ চলছে; সেটিও কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে।

খরচের চিন্তা
খরচ যে খুব বেশি তা নয়। ইজিয়ারের অ্যাম্বুলেন্সের বেস ফেয়ার এক হাজার টাকা। আর প্রতি কিলোমিটার ৯০ টাকা। ধরুন, আপনি ধানমন্ডি থেকে বারডেম যাবেন। রাস্তার দূরত্বে পাঁচ কিলোমিটারের মতো হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হবে এক হাজার ৪৫০ টাকা। জ্যামে পড়ে থাকলেও বাড়তি টাকা দেওয়ার ঝামেলা নেই। পেমেন্টে নিয়েও নেই সমস্যা। ইজিয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া পরিশোধ পদ্ধতি এখন পর্যন্ত ক্যাশে। আগামীতে বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমেও ভাড়া পরিশোধ করা যাবে।

তাদের কথা
ইজিয়ার টেকনোলজিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহেদী হাসান ইমন বলেন, দেশি উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা দেশের মানুষের উপকারে সব সময় কাজ করব। প্রয়োজনীয় জরুরি এই সেবা আরও উন্নত করতে চাই। শুধু ভালো ফিটনেসের অ্যাম্বুলেন্স বা ড্রাইভার কিংবা অ্যাসিসটেন্ট নয়; ইচ্ছা আছে অ্যাম্বুলেন্সে ডাক্তারও থাকবেন। সেটি অবশ্য অন-ডিমান্ড সার্ভিস হবে। এটি নিয়ে কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু রোগীদের কথা চিন্তা করে নয়, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারদের জন্য থাকবে লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লাখ টাকা পর্যন্ত থাকবে এই ইন্স্যুরেন্সের আওতায়। এছাড়া ইজিয়ারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত রোগীর সঙ্গে ব্যবহার, রোগীর সঙ্গে থাকা মানুষদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে, তাদের চলাফেরা কেমন হবে, টাকা চাওয়ার ব্যবহার কেমন হবে সবকিছু ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে।
মেহেদী হাসান জানান, পথে যদি (জেলার বাইরে যেতে) অ্যাম্বুলেন্সের কোনো ধরনের যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। কল সেন্টারে অভিযোগ করলে এক ঘণ্টার মধ্যে সেটির সমাধান করা হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অ্যাম্বুলেন্স পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। ইজিয়ারের কল সেন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলা সেবা নিশ্চিত করতে।