ইজেডে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে ১৪ কারখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক অঞ্চলে একসঙ্গে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাচ্ছে ১৪ শিল্পের কারখানা। একই সঙ্গে আরও ২৯ কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। আগামী বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ইজেডে শিল্পকারখানা ও অবকাঠামোর উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

গতকাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। রাজধানীর ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বেজার কার্যক্রম ও অগ্রগতি-বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে এই প্রথম চারটি শিল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, জাপানের নিপ্পন, বাংলাদেশ ম্যাকডোনাল্ড ও টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলেও প্রথম উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ডাবল গ্লেজিংয়ের কারখানা। এছাড়া বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের আরও ৯টি শিল্প ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে যাচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ পিভিসি কারখানা। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে ১৪টি শিল্পে এরই মধ্যে প্রায় ৯৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং আগামীতে ব্যবসা সম্প্রসারণে আরও ৩৩ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার ডলার বিনিয়েগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২৯টি শিল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছেন। এ শিল্পের কারখানা স্থাপনে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৬১ কোটি ডলার এবং আরও বিনিয়োগ হবে প্রায় ১৯২ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার।  এসব শিল্পে এরই মধ্যে ছয় হাজার ৪০৭ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আরও ৩৮ হাজার ৬৫৮ জনের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের প্রশাসনিক ভবন বিএসএমএসএনের ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ শেখ হাসিনা সরণি, ২৩০ কেভি গ্রিড লাইন এবং সাব-স্টেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে পানি সরবরাহের জন্য ৫০ এমএলডি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

বেজার কার্যক্রম ও অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে পরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য যাত্রা শুরু করে বেজা। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শুরুর প্রক্রিয়া উদ্বোধন করেন।

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়লেও বেজা খুব অল্প সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করেছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বুধবার ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামো  উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ২০২২’ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যাচ্ছে বেজা।

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাববে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস দেয়া হচ্ছে। বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে আগামী দিনে রূপপুর ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এলএনজির দাম বৃদ্ধির কারণে এখন কিছুটা সমস্যা হলেও আগামী দিনে গ্যাস দেয়া সম্ভব হবে। পানির চাহিদা পূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যা দিয়ে পানির চাহিদা মেটানো যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখন খাসজমিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তবে ইজেডে পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করেই শিল্প স্থাপন করতে হবে, এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতেই অর্থনৈতিক অঞ্চল দুর্নীতিমুক্ত হবেÑচুক্তিতে এমন শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ইজেডে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে। তবে বেজার সঙ্গে কাজে সম্পৃক্ত অন্যান্য সংস্থাগুলোয় দুর্নীতি রোধ হলে সার্বিকভাবে দুর্নীতি কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, বেজা বিনিয়োগকারীদের যেমন নানা সুবিধা দিচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হলে বরাদ্দ বাতিলও করছে। এখন পর্যন্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।

বেজা চারটি জিটুজি বিদেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করেছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের পাশাপাশি সিঙ্গার শিল্পের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়ে শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এই জোনে আরও ১০টি বিদেশি ও একটি দেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আসছে।

সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, বর্তমানে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নয়ন কাজ চলমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে এখন পর্যন্ত  প্রায় ২২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া ১২টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক শিল্পোৎপাদন শুরু করেছে এবং আরও ৬১টি শিল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এ অঞ্চলগুলোয় জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়েসহ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। বেজা ঝামেলামুক্ত ব্যবসা পরিচালনার  সুযোগ দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) সেন্টারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে ৪৮টিসহ ১২৫টি পরিষেবা দিচ্ছে।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বেজার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হাসান আরিফসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০