ইডটকোর টাওয়ার টু কমিউনিটি

৯ বছরের মাসুম তার পরিবারের সঙ্গে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে বাস করে। বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হাতিয়ার একটি স্থানীয় স্কুলে সে পড়াশোনা করে। গ্রীষ্মকালে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া তার জন্য এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। কেননা, এ সময়ে তার টিনশেড ক্লাসরুমটি অস্বাভাবিক গরম হয়ে যায়। যেহেতু এলাকাটি এখন পর্যন্ত ন্যাশনাল পাওয়ারগ্রিডের সুবিধা লাভ করেনি, সেহেতু সন্ধ্যা নামতেই পুরো জনপদটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। তাই শত বিপত্তির মুখে পড়লেও প্রতিটি পরিবারকে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য মোমবাতি বা কেরোসিন বাতি জ্বালাতে হয়। অসহনীয় গরম ও স্বল্প আলো পুরো লোকালয়টির জন্য একটি বোঝাস্বরূপ। তাই মাসুমের মতো এলাকার অন্যান্য ছোট শিশু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।
এটি শুধু মাসুমের কাহিনি নয়, পুরো এলাকার চিত্র। সমগ্র জাতি যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে, তখন হাতিয়া দ্বীপের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী তাদের লোকালয়ে শুধু বিদ্যুৎ পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় দ্বীপটির জনগোষ্ঠীর জীবনে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, ক্রমশই তারা দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ছে।
‘টাওয়ার টু কমিউনিটি’ সিএসআর প্রকল্পটির মাধ্যমে হাতিয়ার জনগোষ্ঠীর দুর্ভাগ্য বর্তমানে সৌভাগ্যে পরিণত হয়েছে। এখন তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে, যা তাদের লোকালয়ের জনজীবনে বিপুল পরিবর্তন এনেছে। টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রতিষ্ঠান ইডটকো বাংলাদেশ তাদের সিএসআর প্রকল্পের আওতায় এই বিচ্ছিন্ন এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অবস্থা উন্নয়নের স্বার্থে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছে। ইডটকোর গ্রিন টেলকো টাওয়ার তাদের সোলার পাওয়ার ফ্যাসিলিটি থেকে গড়ে প্রায় চার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। ‘টাওয়ার টু কমিউনিটি’ প্রকল্পটির মাধ্যমে ইডটকো তাদের টাওয়ার সাইটটির আশেপাশের লোকালয়ে বিনা খরচে প্রায় ২০০ ওয়াট সমপরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। এ প্রকল্পে কর্মরত স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ইডটকো এইসিএসআর প্রকল্পটির আওতায় হাতিয়াসহ দেশব্যাপী ৭০০’র বেশি স্থাপনা যেমন: মসজিদ, স্কুল, মাদরাসায় বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
টাওয়ার টু কমিউনিটি প্রকল্পটির মাধ্যমে হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছে। সুবিধাভোগী প্রায় সব পরিবারে এখন বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা রয়েছে। তারা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজ, যেমন পড়াশোনা করা, রান্না করা, মোবাইল ফোন ও ফ্ল্যাশ লাইট চার্জ করার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। তারা খাবার পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। যেহেতু মৎস্য শিকার এলাকাটির অধিকাংশ লোকের প্রধান জীবিকা, তাই তারা বর্তমানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ার পর পরিকল্পনা মোতাবেক কাজে বের হয়। সর্বোপরি বৈদ্যুতিক সংযোগ পাওয়ার পর লোকালয়ের জনগোষ্ঠী যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতো, তা অনেকাংশে কমেছে।
বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে ইডটকো দীর্ঘস্থায়ী সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়, যা দেশব্যাপী সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০